বাংলাহান্ট ডেস্ক: ওডিশার নায়াগড় জেলার বাসিন্দা ড. রমেশ চন্দ্র বিশ্বাল এক অসাধারণ সফলতার কাহিনি (Success Story) রচনা করেছেন। একসময় আমেরিকার ক্লেমসন ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি সাহসী এক সিদ্ধান্ত নেন—বিদেশের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসার। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া রমেশ ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন, কীভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হন। বাবার আর্থিক লড়াই তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, ভারতের কৃষকদের বাস্তব সমস্যার সমাধান করবেন। দেশে ফিরে তিনি তৈরি করেন এক অনন্য “ফার্ম-টু-ফোর্ক” মডেল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষক ও ক্রেতা—দু’পক্ষেরই লাভ নিশ্চিত করা।
ড. রমেশের অনন্য সাফল্যের কাহিনি (Success Story)
নিজের গ্রামে পাইলট প্রকল্প হিসেবে তিনি শুরু করেন “গ্রাম হাট” নামের এক চলমান বাজার, যেখানে ৪০ জন কৃষকের সঙ্গে মিলে ডিজেলচালিত মোবাইল আউটলেটের মাধ্যমে ৬০টি গ্রামে এক হাজারেরও বেশি কৃষিপণ্য বিক্রি করা হত। ক্রেতাদের উৎসাহজনক সাড়া পাওয়ার পর তিনি ১৭ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে “ভিলা মার্ট প্রাইভেট লিমিটেড” প্রতিষ্ঠা করেন এবং সদর দপ্তর ভুবনেশ্বরে স্থানান্তরিত করেন। প্রথমদিকে কোভিড ও লকডাউনের কারণে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও অল্প সময়ের মধ্যেই এই এগ্রি-টেক সংস্থাটি নিজেদের মডেলকে শক্তিশালী করে তোলে (Success Story)।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছেন ট্রাম্প! আমেরিকা দেবে “মারণাস্ত্র”, প্রভাবিত হবে ভারত?
২০২০ সালে যেখানে সংস্থার বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ২৯ লক্ষ টাকা, আজ সেখানে তা বেড়ে ১২ কোটিতে পৌঁছেছে। বর্তমানে “ভিলা মার্ট”-এর সঙ্গে ওডিশার ৩,০০০-রও বেশি গ্রামের প্রায় ১৫,০০০ কৃষক, ৫০টি কৃষক উৎপাদক গোষ্ঠী (FPC) এবং ৬০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী (SHG) যুক্ত আছেন। প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে “ফিজিটাল” মডেলে—অর্থাৎ শারীরিক ও ডিজিটাল দু’য়ের সংমিশ্রণে। প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিক্রির প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ব্যবস্থায় কৃষকেরা বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি আয় করেন এবং ভোক্তারা পান তাজা, সাশ্রয়ী ও পরিষ্কার পণ্য (Success Story)।
ভিলা মার্ট ইতিমধ্যে ভুবনেশ্বরে দুটি সহ চারটি সংগ্রহ ও বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সংস্থার আটটি ব্যাটারি-চালিত মোবাইল আউটলেট রয়েছে, যা সেন্সর, ক্যামেরা ও কোল্ড স্টোরেজ সিস্টেমে সজ্জিত। এই যানগুলি সরাসরি ক্রেতার দরজায় পৌঁছে দেয় তাজা ফল-সবজি। সেন্সরগুলো তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও ইথিলিন গ্যাসের পরিমাণ নজরে রাখে, ফলে পণ্যের আয়ুষ্কাল বাড়ে। অন্যদিকে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও সংস্থাটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে—আদা, হলুদ ইত্যাদির অবশিষ্টাংশ শুকিয়ে তৈরি হয় গুঁড়ো, আর ফুলকপির পাতাগুলো দিয়ে তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট, যা ১০ টাকা প্রতি কেজি দরে কৃষকদের বিক্রি করা হয় (Success Story)।

আরও পড়ুন:ODI-তে অধিনায়কত্ব হারানোর পর মিলল “হিটম্যান”-এর প্রথম প্রতিক্রিয়া, কী জানালেন রোহিত?
২০১৯ সালে “স্টার্টআপ ওডিশা” থেকে অনুদান পাওয়ার পর কোম্পানির ব্যবসা আরও বিস্তৃত হয়। বর্তমানে এটি রিলায়েন্স ফ্রেশ, জিওমার্ট, সুইগি ইনস্টামার্ট ও ব্লিংকিটের মতো বড় খুচরা বিক্রেতাদের কাছেও পণ্য সরবরাহ করছে। এই সাফল্যের জন্য ভিলা মার্ট পেয়েছে “টাটা সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ চ্যালেঞ্জ” এবং “ন্যাশনাল স্টার্টআপ অ্যাওয়ার্ড ২০২১”-সহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিজ্ঞানী থেকে সমাজসেবী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার এই যাত্রায় ড. রমেশ বিশ্বাস প্রমাণ করেছেন—দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত কখনও ভুল ছিল না; বরং সেটিই গড়েছে এক নতুন কৃষি বিপ্লবের দিশা (Success Story)।













