আর্থিক প্রতারণা মামলায় ধৃত আমির খানের সঙ্গে যোগ তৃণমূলের মন্ত্রী-কাউন্সিলর, দাবি ইডি-র

বাংলাহান্ট ডেস্ক: গত ১০ সেপ্টেম্বর কলকাতার মেটিয়াবুরুজের পরিবহন ব্যবসায়ী নিসার আলির বাড়িতে তল্লাসি অভিযান চালিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। তাঁর ছোট ছেলে আমির খানের (Amir Khan) ঘর থেকে ১৭.৩২ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করে তারা। একটি গেমিং অ্যাপ প্রতারণা কাণ্ডে (app money laundering scam) নাম জড়িয়েছিল অভিযুক্ত আমিরের। তবে সেই সময় আমির সেখানে না থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারেননি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা।

তবে শনিবার উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে আমিরকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে কলকাতা পুলিশ। আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাতজের নির্দেশ দেন বিচারপতি। প্রসঙ্গত, ইডি-র অভিযানের পর থেকেই পুরোনো মামলা নিয়ে কলকাতা পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। নিসারের বাড়ি গেলে বলা হচ্ছে, তিনি বাড়িতে নেই। এই মামলায় এবার একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল।

ইডি-র দাবি, গেমিং অ্যাপ প্রতারণা মামলায় এবার বন্দর এলাকার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম সামনে এসেছে। ওই কাউন্সিলরের এক ভাই আবার রাজ্যের মন্ত্রিসভার এক দাপুটে সদস্য। এই কাউন্সিলর আমিরের সঙ্গে ওই মন্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন।

সূত্রের খবর, আমিরের এক বান্ধবীর নামে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া রয়েছে নিউটাউনে। সেই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল শতাধিক মোবাইলের সিমকার্ড। সেগুলি পরীক্ষা করেই বন্দর এলাকার ওই প্রভাবশালী কাউন্সিলরের পরিবারের কথা জেনেছে ইডি। 

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ওই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে আমিরের যোগাযোগ রয়েছে। তদন্ত থেকেই সেটা স্পষ্ট। কিন্তু একটি মিসিং লিঙ্ক থেকে যাচ্ছিল। অভিযুক্ত আমিরের সঙ্গে ওই মন্ত্রীর কোনও সরাসরি যোগ বোঝা যাচ্ছিল না। তবে এবার বন্দর এলাকার ওই কাউন্সিলরের নাম উঠে আসায় সেই ধারণা স্পষ্ট হল। সরাসরি নয়, বরং কাউন্সিলরের মাধ্যমে মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত আমির।

শুধু তাই নয়, আমিরের ১৪৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন থেকেও ওই তৃণমূল কাউন্সিলরের পরিবারের এক সদস্যের নাম উঠে এসেছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে অ্যাপ প্রতারণা চক্রের লাভের একটি মোটা অংশ ওই কাউন্সিলরের মাধ্যমে রাজ্যের মন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যেত। 

এই মুহূর্তে ইডি-র রেডারে রয়েছেন নিসার আলিও। টাকা উদ্ধারের পর থেকেই নিসারের রামনগরের পরিবহন ব্যবসার অফিসে ঝুলছে তালা। এমনকি, শাহি আস্তাবল লেনেতাঁর বাড়ির দরজাও প্রায় সব সময় বন্ধ থাকছে। নিসারের পরিবারের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ রাখতে চাইছেন না প্রতিবেশীরাও। 

আমির খানকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তৈরি হচ্ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে এর মধ্যেই উত্তরপ্রদেশ থেকে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে কলকাতা পুলিশ।

ইডি-র গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, এখন একাধিক মামলায় আমিরকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে চাইবে পুলিশ। তাই আমিরকে জেল হেফাজতে পাঠানো হলে আদালতে আবেদন করে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে ইডি।

তদন্তকারীরা দাবি করছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধারের পর সতর্ক হয়ে যায় আমির। তাই তৃণমূলের ওই প্রভাবশালী কাউন্সিলরের সঙ্গে মিলে অ্যাপ প্রতারণা চক্রের লাভ্যাংশের টাকা বিভিন্ন জায়গায় গচ্ছিত রাখার চেষ্টা করছিল সে। তখনই নিজের বাড়ির দোতলার ঘরে ওই বিপুল পরিমাণ নগদ রেখে দেয় সে। 

Subhraroop

সম্পর্কিত খবর