বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত বছর থেকে নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে তোলপাড় রাজ্য। প্রাক্তন মন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের বহু নেতা বিধায়ক, চাকরি বিক্রির অভিযোগে জেলবন্দি বহুজনা। বঙ্গের নিয়োগ কেলেঙ্কারিতেই নবতম সংযোজন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujay Krishna Bhadra)। গত মঙ্গলবারই তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে ইডির (ED) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। আর এই ধৃত সুজয়বাবুকে গ্রেফতারির পর থেকেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে।
ইডি সূত্রে খবর, চাকরি-বিক্রির বৈঠক হত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (West Bengal Board of Primary Education) অফিসে বসে। তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক (বর্তমানে জেলবন্দি) মানিক ভট্টাচার্যর (Manik Bhattacharya) কাছে আসতেন কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। নিজের কাজ করানোর জন্যই সেখানে যেতেন কাকু। আদালতে রিমান্ড লেটারে এমনই বিস্ফোরক দাবি ইডির।
আর কি জানা যাচ্ছে? ধৃত মানিক ভট্টাচার্যর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট হিস্ট্রি ঘেঁটে ও মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে জেরা করে এই ‘কালীঘাটের কাকু’র বিষয়ে বিস্ফোরক সব তথ্য সামনে এসেছে। ইডির দাবি জিজ্ঞাসাবাদে তাপস বলেছেন, ২০১৪ সালের টেটের জন্য ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা সুজয় ভদ্রর হাত দিয়ে মানিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।
এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের থেকে মোট ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে নিয়েছিলেন তৃণমূলের বিতাড়িত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। সুজয়কৃষ্ণ-মানিক-কুন্তল এই তিন মাথা দিয়েই রাজ্য জুড়ে কোটি কোটি টাকার চাকরি বিক্রি হয়েছে বলে রিমান্ড লেটারে দাবি ইডির।
প্রেক্ষাপট : গত মঙ্গলবার টানা ১২ ঘন্টা জেরার পর ইডির হাতে গ্রেফতার হন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। প্রসঙ্গত, এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে গোপাল দলপতি প্রথম কাকুর উল্লেখ করেন। এরপর নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের সূত্রেও ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা উঠে এসেছিল। শিক্ষক কেলেঙ্কারির অভিযোগেই ধৃত তাপস মণ্ডল সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুন্তল ঘোষ বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। ”
তারপরই খোঁজ মেলে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। এরপর তদন্তের স্বার্থে কাকুকে দু’বার তলব করেছিল সিবিআই। সেই সময় একবার নিজে হাজিরা দিয়ে পরের বার আইনজীবীকে দিয়ে কিছু নথি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ইডির নজরে পরে কালীঘাটের কাকু।
কিছুদিন আগেই সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সেই সময় দীর্ঘক্ষণ ধরে বেহালায় কালীঘাটের কাকুর একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল ইডি। গত সপ্তাহে তার বেহালার বাড়িতে তল্লাশি চালায় সংস্থা। সেই সময় সুজয়ের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল তারা। জানা যায়, সেই মোবাইল থেকেই বেশ কিছু তথ্য তদন্তকারীদের হাতে আসে। এরপরই গোয়েন্দা সংস্থার তরফে ডাক পড়ে তার।
সেই মতোই বুধবার তলব করা হয় ‘কাকু’ কে। আর তারপরই গ্রেফতার। বিগত কিছুমাস ধরে ‘কালীঘাটের’ কাকুকে নিয়ে কম চৰ্চা হয়নি। ইডি সূত্রে খবর, লাগাতার তদন্তে অসহযোগিতা করায় গতকাল রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাকুর গ্রেফতারে এই তদন্ত কোন মোড় নেয় সেটাই এবার দেখার বিষয়।