বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘পড়াশোনা করে অধিক রোজগার করার জন্য চাকরিবৃত্তি করার চাইতে স্বাধীনভাবে চপ মুড়ি এবং তেলেভাজা বিক্রি করা অনেক সম্মানের’, এদিন নিজের ফেসবুক পোস্টে ঠিক এমনই একটি মন্তব্য শেয়ার করেন তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) বিধায়ক তথা লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী (Manoranjan Bapari)। পরবর্তীতে আরো কয়েকটি পোস্ট করেন তিনি এবং এগুলিকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে একের পর এক বিতর্কের ঝড় উঠতে শুরু করেছে।
এদিন ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট করেন বলাগড়ের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তিনি লেখেন, “যারা প্রচুর পড়াশোনা করে অধিক রোজগারের জন্য চাকরবৃত্তিকেই জীবনের পরমার্থ মনে করে তার চাইতে যে লোকটি স্বাধীন ভাবে চপ মুড়ি, তেলে ভাজা বিক্রি করে সামান্য রোজগার করে সৎভাবে জীবন যাপন করে তার সন্মান অনেক বেশি বলে আমি মনে করি।”
যদিও তাঁর এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের পরেই একের পর এক সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করে। এক ব্যক্তি যেমন প্রতিক্রিয়ায় জানান, “তাহলে আপনার এই ওঠে আসার গল্পটার কি মূল্য থাকে? যদি চা ও চানাচুর বিক্রি করেই সবাই জীবন কাটাবে, তাহলে বিধায়করা নিজেদের বেতন পাবলিকের টাকা থেকে তুলেন কেন? তাঁদের কাজটা কী?”
উল্লেখ্য, একের পর এক সমালোচনার ঝড় উঠতে থাকলে পরবর্তীতে আরও একটি পোস্ট করেন মনোরঞ্জনবাবু। তিনি লেখেন, “বলছি যে সব মা বাবাই চান যে তার সন্তান শিক্ষিত হোক। সেটা কোন দোষের নয়। সরকারও চায় সবাই লেখাপড়া শিখুক। তা চাকরির সংখ্যা তো সীমীত। একশোজন লেখা পড়া জানা লোকের মধ্যে মাত্র পাঁচ দশ জন চাকরি পেতে পারে। বাকিরা কী করবে? এবার তারা যদি বলে আমি লেখাপড়া শিখে টোটো কেন চালাব? চপের দোকান কেন দেব? আপনার জবাব কী হবে?”
এক্ষেত্রেও অবশ্য থেমে থাকেননি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরে এক ব্যক্তি লেখেন, “মাসে ১.১৩ লাখ টাকা পেলে এসব বলাই যায়।” অপর এক ব্যক্তির কথায়, “আপনাকে যথেষ্ট সন্মান করি, কিন্তু আপনিও তো একদিন স্কুলের রান্না করতেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চাকরি চেয়েছিলেন, তাহলে আপনাকে কেন এই প্রশ্নটা করতে হচ্ছে? কেন শ্রমিকরা বাইরের রাজ্যে কাজের খোঁজে যায় তা জানার তো আপনার কাছে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।”
কয়েক মুহূর্ত পূর্বে তৃণমূল বিধায়ক অপর একটি পোস্ট করেন, যেখানে শ্রমজীবী প্রসঙ্গ টেনে ধরে তিনি নিজের জীবন কাহিনীও তুলে ধরেন জনসমক্ষে। তিনি লেখেন, “আমি একজন শ্রমজীবী মানুষ। শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান। আমার বাবা মজুর খাটতেন। মা বাবুদের বাসায় এটো বাসন মাজতেন। আর আমি চায়ের দোকানে গেলাস ধোয়া থেকে শুরু করে ডোম সুইপার সব কাজ করেছি। এখনও আমি শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে কাজ করি। বিধায়ক হয়েও বাবু ভদ্দোর হয়ে উঠতে পারিনি।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর সময় ১ হাজার টাকা নিন। সঙ্গে মাকে বলুন একটু ঘুগনি করতে। এরপর ঘুগনি, তেলেভাজা এবং সঙ্গে বাদাম ও ছোলা ভাজা নিয়ে বসে পড়ুন। এত বিক্রি হবে যে কুলোতে পারবেন না।” মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের পর মিমের বন্যা বয়ে যায় সর্বত্র আর এদিন সেই প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের পোস্ট সামনে আসতেই পুনরায় একবার সমালোচনায় সরব হলেন সকলেই।