গোবর দিয়েই একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে তাক লাগালেন কৃষক, ব্যবহার করা যাবে ১০ বছর পর্যন্ত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে অনেকেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন নতুন ধরণের কাজ শুরু করে সফলতার শিখরে পৌঁছে যাচ্ছেন। সেই তালিকায় বাদ নেই কৃষকেরাও। মূলত, বর্তমান প্ৰতিবেদনে আমরা আপনাদের কাছে এমন একজন কৃষকের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি ইতিমধ্যেই তাঁর অনবদ্য কৃতিত্বের জন্য উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) মাদুরাইয়ের পেরুঙ্গামানাল্লুর গ্রামের জৈব চাষী পি গণেশন কৃষির সমস্ত দিক সম্পর্কে অত্যন্ত দক্ষ। প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি তাঁর নয় একর কৃষিজমিকে একটি জৈব খামারে পরিণত করেছিলেন।

এই প্রসঙ্গে গণেশান জানিয়েছেন যে, পরিবেশ-বান্ধব কৃষিতে গরুর গোবর অন্যতম অপরিহার্য উপাদান। তাই, যখন তিনি জৈব চাষ শুরুর কথা ভাবেন তখন তিনি জীবামৃত এবং পঞ্চগব্যের মতো জৈব সার তৈরির জন্য যথেষ্ট গোবরের জোগানের লক্ষ্যে কয়েকটি গরু কিনেছিলেন। তিনি আরও বলেন, “আমি আমার কৃষিজমিতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি গোবর পেতে শুরু করি। তখন আমি সেগুলিকে নষ্ট না করে এগুলি কাজে লাগানোর জন্য একটি বিকল্প ভাবতে শুরু করি।”

এমতাবস্থায়, তিনি গোবর এবং গোমূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরির কথা ভাবেন। মূলত, তিনি হস্তশিল্পের মাধ্যমে গোবর দিয়েই বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করেন। গণেশের ছোট ছোট মূর্তি তৈরি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অলংকার সবকিছুই বানিয়েছেন গণেশান। শুধু তাই নয়, তিনি এভাবেই ১৫০ টিরও বেশ পণ্য তৈরি করেছেন। যার ফলে তিনি তাঁর রাজ্যের পাশাপাশি বাইরে থেকেও এখন অর্ডার পাচ্ছেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “আমি প্ৰতিটি জিনিস আমার হাতেই তৈরি করি। কোনো যন্ত্রপাতি বা ছাঁচের ব্যবহার করি না। এছাড়াও, আমি গোবর এবং গোমূত্র ছাড়া অন্য কোনো উপাদানও যোগ করি না। তাই, এগুলি ১০০ শতাংশ প্রাকৃতিক এবং পরিবেশ বান্ধব।” এছাড়াও, গণেশান জানিয়েছেন, “এগুলি তৈরিতে ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। পণ্যের পুরুত্ব অনুসারে সেগুলিকে কয়েক দিন যাবৎ রোদে শুকোতেও হয়। বেশিরভাগ পণ্য পাঠানোর আগে কমপক্ষে ২০ দিনের জন্য রাখা হয়।”

এদিকে, বর্ষাকালে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, “আর্দ্র আবহাওয়া এই কাঁচামালে কৃমি বা ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। যা পণ্যের শক্তিকে প্রভাবিত করে দেয়। তাই, আমি বর্ষাকালে এগুলিকে তৈরি করি না। পণ্যগুলি কেবল তখনই নিখুঁত হয়ে ওঠে যখন তারা সূর্যের ভালো তাপ পায়”। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, গণেশের মূর্তি তৈরি করে সেগুলিকে বিক্রির মাধ্যমে গণেশান দারুণ লাভবান হয়েছেন।

WhatsApp Image 2022 11 12 at 8.20.28 PM

ওই মূর্তি বিক্রি করেই, প্রথম বছরে তিনি প্রায় ১২ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছর, তিনি কিছু নতুন পণ্য যোগ করেন। পাশাপাশি, লাভের পরিমান দাঁড়ায় ২৫ হাজার টাকায়। এদিকে, তৃতীয় বছরে তিনি ৭৫ হাজার টাকা উপার্জন করেন। এছাড়াও তিনি কুমকুম বাক্স, মশলার বাক্স, কলম স্ট্যান্ড, ফলের স্ট্যান্ড, ধর্মীয় প্রতীক এবং বিভিন্ন অলংকার সহ আরও অন্যান্য জিনিস তৈরি করেন। তবে, প্রায় ৩০ কেজি গোবর ব্যবহার করে তৈরি একটি ছয় ফুট লম্বা বুদ্ধ মূর্তি গণেশানের অন্যতম সেরা কাজ হয়ে রয়েছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর