তীর-ধনুক বিক্রি করতেন বাবা! কেরলের প্রথম আদিবাসী IAS অফিসার হয়ে ইতিহাস গড়লেন মেয়ে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক পড়ুয়াই চান ভালোভাবে পড়াশোনার মাধ্যমে জীবনে সফলতা লাভ করতে। কিন্তু সবার জন্য এই সাফল্যের যাত্রা সমান হয় না। রীতিমতো কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হয় সকলকে। এমতাবস্থায় অনেকেই আবার মাঝপথে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু যাঁরা নিজের ওপর ভরসা এবং বিশ্বাসকে সঙ্গে করে নিজের লক্ষ্যতে স্থির থাকেন তাঁরাই গড়ে তোলেন উত্তরণের কাহিনি (Success Story)। শুধু তাই নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের কাছেই তাঁরা হয়ে ওঠেন এক অনুপ্রেরণার উৎস।

বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা ঠিক সেই রকমই এক লড়াকু মহিলার প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি ভারতের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা UPSC-তে দারুণভাবে সফলতা লাভ করেন। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে লড়াই শুরু করেই তিনি হাসিল করেছেন তাঁর স্বপ্নকে। শুধু তাই নয়, এক অনন্য কৃতিত্বের অধিকারীও হয়েছেন তিনি। বর্তমানে কেরালার প্রথম আদিবাসী IAS অফিসারের তকমা এখন তাঁর কাছেই রয়েছে।

পরিচয়:
বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা মূলত শ্রীধন্যা সুরেশের (IAS Sreedhanya Suresh) কথা বলছি। যিনি কেরালার ওয়ানাড জেলার পজুথানা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। গ্রামেরই সরকারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন শ্রীধন্যা। এরপরে তিনি সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এমতাবস্থায় স্নাতক হওয়ার পরে, শ্রীধন্যা কোজিকোডের কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। পড়াশোনা শেষ করে কেরালায় তপসিলি উপজাতি উন্নয়ন বিভাগে কেরানি হিসেবেও কাজ করেন শ্রীধন্যা। এছাড়াও, তিনি কয়েকদিন ধরে ওয়ানাডের আদিবাসী হোস্টেলের ওয়ার্ডেন ছিলেন।

বহু কষ্টে পড়িয়েছেন বাবা:
শ্রীধন্যা সুরেশের বাবা একজন শ্রমিক। যিনি দৈনিক মজুরির মাধ্যমে কোনোমতে সংসার চালাতেন। জানা গিয়েছে, শ্রীধন্যার তিন ভাই-বোন রয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর বাবা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য বাজারে তীর-ধনুকও বিক্রি করতেন।

শুরু হল UPSC-র প্রস্তুতি:
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করার পরে একজন IAS অফিসারকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে, শ্রীধন্যা সুরেশ UPSC-র জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। এই পরীক্ষার প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় তিনি ব্যর্থ হলেও হাল না ছেড়ে দিয়ে তিনি আরও পরিশ্রম বাড়িয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান।

তৃতীয় প্রচেষ্টায় মেলে সাফল্য:
ব্যর্থতাকে দূরে সরিয়ে রেখেই শ্রীধন্যা ফের পরীক্ষায় বসেন এবং ২০১৮ সালে তৃতীয় প্রচেষ্টায় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তিনি দারুণভাবে উত্তীর্ণ হন। ফলাফলের ভিত্তিতে তিনি ৪১০ নম্বর স্থানে ছিলেন।

কেরালার প্রথম আদিবাসী মহিলা কালেক্টর:
UPSC পরীক্ষায় সফল হয়ে শ্রীধন্যা তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে সমর্থ হন। শুধু তাই নয়, তাঁর এই বিরাট সফলতার পর তিনি কেরালার প্রথম আদিবাসী মহিলা হিসেবে কালেক্টরের পদ সামলাচ্ছেন। আপাতত, তিনি কোঝিকোড়ের জেলা কালেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

sreedhanya 1 1

সবার জন্য অনুপ্রেরণা:
বারংবার ব্যর্থ হওয়া সত্বেও এবং দারিদ্রের ভ্রূকুটিকে দূরে সরিয়ে রেখেই শ্রীধন্যা সুরেশ তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, কঠোর পরিশ্রম করলেই সাফল্য অর্জন সম্ভব। এমতাবস্থায়, তাঁকে দেখে দেশের লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী অনুপ্রাণিত হবেন। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর