বাংলাহান্ট ডেস্ক : মুষলধারে বৃষ্টির জেরে ভারতের উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এর মধ্যে অসম ও মেঘালয় রাজ্যে বড় বড় নদ–নদীর জল বিপদ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে জনপদও। অসমের মতোই এক অবস্থা মেঘালয়তেও। সেখানেও বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন। এ দুই রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিগত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি শুরু হতেই ফের একবার বন্যা শুরু হয়েছে অসমে। একাধিক জায়গায় ভূমিধসও নামছে। অসম-মেঘালয় দুই রাজ্য মিলিয়ে এখনও অবধি ৪২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে বন্যা ও ধসে। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন তরফ থেকে। অন্যদিকে, মেঘালয়ে এক সপ্তাহে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবারই অসমের হোজাই জেলায় একটি উদ্ধারকারী বোট ডুবে যায়। উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত দল পাঠানো হয়েছে ওই স্থানে। ২১ জন যাত্রীকে কোনওমতে উদ্ধার করা হলেও, নিখোঁজ হয়ে যায় তিনটি শিশু।
একাধিক জায়গায় নদীর পাড় ভেঙে গিয়েছে। বন্যা ও ধসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কপথও। গুয়াহাটি থেকে একাধিক জায়গার যোগাযোগ পথ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বন্যার জেরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অসম প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বন্যার জেরে প্রায় ৪ হাজার গ্রাম জলে ডুবে গিয়েছে। কমপক্ষে সাড়ে ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ বন্যায় প্রভাবিত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তৈরি ৫১৪ টি ত্রাণ শিবিরে এখনও অবধি ১ লক্ষ ৫৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র সহ একাধিক নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায়, উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে।
বন্যার খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। গতকালই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, প্রধানমন্ত্রী ফোন করে বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন এবং কেন্দ্রের তরফে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষদের উদ্ধারের জন্য গুয়াহাটি ও শিলচরের মধ্যে বিশেষ বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে, মেঘালয়ের মাইসিনরাম ও চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বিগত কয়েকদিনে। ১৯৪০ সালের পর এবারের বৃষ্টির পরিমাণই সর্বোচ্চ বলে জানা গিয়েছে।
মেঘালয়তেও অসমের মতোই এক অবস্থা । সেখানেও বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন। বন্যা ও ধসের কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানিয়েছেন, বন্যায় মৃতদের পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একইভাবে ত্রিপুরাতেও রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। বিগত ৬০ বছরে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে জানানো হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টির জেরে ত্রিপুরাতেও হড়পা বান শুরু হয়েছে। ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। তবে এখনও অবধি কোনও মৃত্যুর খবর মেলেনি। অরুণাচল প্রদেশেও সুবানসিড়ি নদী প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় একটি বাঁধ ডুবে গিয়েছে। বৃষ্টিতে ভূমিধস হয়ে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়েছে।