বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতে মেট্রো, মনোরেলের পর এবার আকাশে উড়ন্ত বাস অর্থাৎ এরিয়াল ট্রাম-ওয়ের কাজ শুরু হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করি সম্প্রতি এই বিষয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজেই তার এক টুইট বার্তায় এই তথ্য দিয়েছেন।
বায়বীয় অর্থাৎ এরিয়াল ট্রাম-ওয়ে একটি অত্যাধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা। মূলত সড়কে ক্রমবর্ধমান যানজটের চাপের পাশাপাশি মেট্রো বা মনোরেলে বাড়তে থাকা ভিড়ের কারণে এখন ভারতেও এই পরিবহন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা চলছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এটি পার্বত্য এলাকায় যানজট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
কিভাবে কাজ করবে এই ব্যবস্থা:
আপনি যদি কখনও পাহাড়ে ভ্রমণ করে থাকেন তবে অবশ্যই দেখেছেন যে নদী বা খাদের ওপর দিয়ে একটি পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে পার হওয়ার জন্য দড়ির সাহায্যে মানুষ নিজেকে বা মালপত্র টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আসল পদ্ধতি এখানেই লুকিয়ে রয়েছে। এতে, একটি দড়ির উভয় প্রান্ত স্থায়ীভাবে বাঁধা থাকে। এখন যদি এই প্রযুক্তিটিকে বৈদ্যুতিক মোটর এবং ট্র্যাকশন কন্ট্রোল ইউনিটের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়, তবে আধুনিক বায়বীয় বা এরিয়াল ট্রাম-ওয়ে তৈরি হয়ে যাবে।
এরিয়াল ট্রাম-ওয়ে গন্ডোলার থেকে আলাদা:
এছাড়াও, আপনি যদি কখনও জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গ বা উত্তরাখণ্ডের আলিতে গিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই গন্ডোলাতে ভ্রমণ করেছেন। এটি বিদেশের অনেক পর্যটন স্পটে, বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় চালু করা হয়েছে। তবে, স্থানীয়রা এটিকে এরিয়াল ট্রাম-ওয়ের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু এটি গঠনগতভাবে গন্ডোলার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
গন্ডোলায় সাধারণত একটি একক দড়িতে বাঁধা অবস্থায় বেশ কয়েকটি কেবিন থাকে। যেখানে একটি ঢালাই দড়ি থাকে যার উপর এই সমস্ত কেবিন ক্রমাগত চলাচল করে। এদিকে এরিয়াল ট্রাম-ওয়েতে একটি রুটে মাত্র দু’টি কেবিন থাকে। লোহার দড়িতে বাঁধা এই কেবিনগুলি চলাচলের জন্য একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। একটি কেবিন উপরে গেলে অন্য কেবিন নিচে চলে যায়। এতে, কেবিনটি বৃত্তাকারে নড়াচড়া না করে বরং সামনের দিকে এবং পেছনের দিকে চলে।
এরিয়াল ট্রাম-ওয়ের সুবিধা:
পাহাড়ি বা দুর্গম এলাকায় যেখানে রাস্তা নির্মাণ করা অত্যন্ত কঠিন বা খুব ব্যয়বহুল সেখানে ট্রাম-ওয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে একটি দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে। পাশাপাশি, এতে একসঙ্গে ২৫ থেকে ২৩০ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া মালপত্রও খুব সহজেই বহন করা যায় এতে।
সাধারণত এগুলির গতি প্রতি ঘন্টায় ৪৫ কিমি পর্যন্ত হতে পারে। এমতাবস্থায়, এটি বড় শহরগুলিতেও পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ মেট্রো বা মনোরেলের তুলনায় এগুলি তৈরির খরচ খুব কম। এছাড়াও, এটি কম জায়গা দখল করে থাকে।
এরিয়াল ট্রাম-ওয়ে কোথায় কোথায় চলে:
একাধিক ইউরোপীয় দেশ এবং আমেরিকার অনেক এলাকায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এই পরিবহণ মাধ্যম। নিউইয়র্কের রুজভেল্ট আইল্যান্ডের ট্রাম-ওয়ে পরিষেবা খুব বিখ্যাত। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া, আলাস্কার মতো জায়গাতেও মানুষেরা এটি প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি, এটি জার্মানি, ফ্রান্স এবং আল্পস পর্বতমালার নিকটস্থ দেশগুলিতে খুব জনপ্রিয় পরিবহণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।