চরম দারিদ্র্যতায় জীবন দুর্বিষহ! ফুটবল ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন বাংলার আদিবাসী তরুণী

বাংলাহান্ট ডেস্ক : গোয়ালতোড়ের জিরাপাড়া অঞ্চলের ছোট নাকদনা গ্রামের বাসিন্দা কালীমণি মাণ্ডি। কালীমণি কিছু বছর আগে পর্যন্ত ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। অঞ্চল বা ব্লক স্তরের দলে সবার প্রথম পছন্দ ছিলেন কালীমণি। মাঝ মাঠে খেলতেন তিনি। ফুটবলের জন্য পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। তবে ফুটবল খেলে চলছিল না সংসার। ধীরে ধীরে সংসার গ্রাস করছিল দারিদ্রতা।

তাই উপায় না পেয়ে বছর দেড়েক আগে ইস্টলমেন্টে কিনে ফেলেন একটি টোটো। জিরাপাড়া থেকে গোয়ালতোড় পর্যন্ত টোটো চালিয়ে কালীমণি  ১৩ সদস্যের সংসার টানছেন। শুক্রবার ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী শক্তির জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। কিন্তু বাংলার এই অখ্যাত গ্রামের কালীমণিদের কথা কি কেউ একবারের জন্যও জানতে চেয়েছে?

আরোও পড়ুন : আম্বানির বিয়েতে চুরি গেল জাকারবার্গের স্ত্রীর গয়না! সাড়ে তিন ঘণ্টা তল্লাশির পর যা হল …

ছোট নাকদনা গ্রামের বাসতা পাড়ায় আলু ক্ষেতে গতকাল পাওয়া গিয়েছিল কালীমণিকে। পরিবারের সদস্যদের সাথে আলু তুলছিলেন তিনি। কেন ফুটবল ছেড়ে দিতে হল এই প্রতিভাবান আদিবাসী তরুণীকে? আক্ষেপের সুরে কালীমণি বলেন,  ‘‘খেললে কি আর সংসার চলবে! একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। তাই টোটো চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই।”

আরোও পড়ুন : চিনকে রুখতে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ ভারতের, লাল সেনার চিন্তা বাড়িয়ে অরুণাচলে বড় পদক্ষেপ মোদীর

তিনি জানান, “মেঘলা আবহাওয়া। বৃষ্টি হলে আলুর ক্ষতি হবে। তাই তাড়াতাড়ি আলু তুলে নিচ্ছি। তাই এই ক’দিন টোটো নিয়ে বেরোতে বেলা হচ্ছে। বাবা মারা যাওয়ার পরে সংসারে অভাব বাড়ে। পড়াশোনা বেশিদূর হয়নি। বছর দেড়েক আগে কিস্তিতে টোটো কিনে চালাতে শুরু করি। মূলত টোটোর আয় থেকেই সংসার চলে।”

 

পাশাপাশি তার আরোও সংযোজন, “এক ফসলি জমিতে যা চাষ হয় তাও সংসারে কাজে লাগে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাই। সম্প্রতি একশো দিনের বকেয়া টাকাও পেয়েছি। সেসবও সংসারে দিয়ে দিই।’’ প্রতিযোগিতামূলক খেলা থেকে সরে আসলেও কালীমণি ফুটবলের সাথে সম্পর্ক একেবারে ত্যাগ করেননি। স্থানীয় মেয়েদের নিয়ে একটি ফুটবল টিম তৈরি করেছিলেন।

soccer ball goal

সময় পেলেই অনুশীলন করেন সেই দলের সাথে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন উঠতি খেলোয়াড়দের। তার সাথে চলতে থাকে টোটো নিয়ে জীবন সংগ্রাম। রাত হোক কিংবা দিন, সব সময় এক ডাকেই সাড়া মেলে কালীমণির। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়,  ‘‘কালীমণির টোটো আছে বলে এলাকার মানুষের বহু সুবিধা হয়েছে। ভোর হোক বা রাত— ডাকলেই পাওয়া যায়।”

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর