বাংলাহান্ট ডেস্ক : একুশের বিধানসভা নির্বাচনের জয়ী হয়ে বাংলার ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। একবছরও পেরোয়নি এখনও। অনেকেরই মতে বাংলায় তৃণমূলের এই বিপুল জয়ের পিছনে মুসলিম ভোটের একটা বড় রকমের হাত ছিলই। বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কার্যতই নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মসনদে বসেন মমতা। বছর ঘুরতে পারেনি এখনও। এরই মধ্যে উলটো সুর রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গলায়? খানিক তেমনটাই ইঙ্গিত উঠে এল ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা নাজবোত সিদ্দিকির কথায়৷ তাঁর সাফ দাবি, ‘রাজ্যে বিজেপি আসার দরকার।’ একই সঙ্গে মমতাকে গদ্দার বলেও দাগলেন তিনি।
এদিন আনিস হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও টানতে দেখা যায় পীরজাদাকে। উঠে আসে রামপুরহাট গণহত্যা মামলার কথাও। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘দিদি তৃতীয়বার ক্ষমতায় আশার পর থেকে মুসলিমরা রাজ্যে খুব বিপদে আছে। আমরা এর আগে বুঝতে পারিনি যে মুসলিমরা এত বিপদে পড়বে। দিদি আমাদের ব্যবহার করলেন। ভোটের সময় আমাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এলেন। আর এখন আমাদের ব্যবহার করে ফেলে দিলেন তিনি। মুসলিমরা রাজ্যে কতটা বিপদে, তা তো সবাই দেখতে পাচ্ছেন। বীরভূমে কী চলছে, আনিস খানকে কীভাবে মারল। এই সব ঘটনার কোনও বিচার এখনও মেলেনি। দিদি টাকা দিয়ে তাঁদের সবাইকে চুপ করাতে চায়।’
এর পর একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করতে শোনা যায় তাঁকে। এমনকি আসন্ন আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনেও তৃণমূলকে ভোট দিতে বারণ করেন নাজবোত। তিনি বলেন, ‘দিদি বলেছিলেন যে তিনি বাংলায় শান্তি আনবেন। এখানে খুন, রাহাজানির মতো ঘটনা বন্ধ হবে। এখানে চাকরি দেবেন। কিন্তু কিছুই হয়নি সেসব। দিদি মুসলিমের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু আসানসোল ভোটে আমি সব সাধারণ মানুষের কাছেই আবেদন রাখব, এখন ভাবার সময় এসেছে। দিদি আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। দিদি আমাদের সঙ্গে গদ্দারি করেছেন।’
তাঁর আরও দাবি, ‘বিজেপি আমাদের ভালো বাসে না। কিন্তু আমরা বিজেপিকে ভালোবাসব। বাংলায় বিজেপির আসা জরুরি। তৃণমূলের নেতারা যেভাবে খারাপ হয়ে গিয়েছে, যেভাবে গদ্দার হয়ে গিয়েছে এদের শায়েস্তা করার জন্য বিজেপিকে প্রয়োজন।’
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে মুসলিম ভোটের একটা ভালো অংশই গিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের ঝুলিতে। বাংলার সম্প্রতি ঘটে চলা সন্ত্রাসের ঘটনায় বেশিরভাগ সময়েই আক্রান্তের তালিকায় উঠে আসছে সংখ্যালঘু নাম। সেই কারণেই কি তবে এবার উলটো সুর বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ে? তৃণমূলকে শায়েস্তা করতে তাই বিজেপিরই হাত ধরতে চাইছে সংখ্যালঘুরা? উল্লেখ্য, আজমীর শরিফের পর ফুরফুরা শরিফই দেশের সর্ববৃহৎ মুসলিম ধর্মক্ষেত্র। তাই সেখানকার পীরজাদার কথায় যে বেশ কিছুটা প্রভাব পড়বেই রাজ্যের রাজনীতিতে তা বলাই বাহুল্য। তবে সেই প্রভাব কতখানি তাই এখন দেখার। এই বিষয়ে অবশ্য তৃণমূল বা বিজেপি কোনও তরফ থেকেই কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।