বাংলাহান্ট ডেস্ক : মর্মান্তিক এক ঘটনার সাক্ষী হলো বর্ধমানের কেতুগ্রাম। সুদের টাকা না দিতে পারায় দুই পা খোয়াতে হলো এক ব্যক্তিকে। চোখের সামনে চলন্ত ট্রেন এসে ছিন্নভিন্ন করে দিল তার নিজের দুই পা । তবুও অসহায় ভাবে সেখানেই পড়ে থাকলেন সেই ব্যক্তি। ধার নিয়ে নিজের দুই পা সুদ হিসেবে দিতে হলো তাকে। চলতি মাসে গত বৃহস্পতিবার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের কেতুগ্রামে।
জানা গেছে ওই ব্যক্তির নাম রুদ্র ভৈরব মুখোপাধ্যায়। পেশায় তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। তিনি তার বন্ধুর কাছ থেকে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ধার হিসেবে নিয়েছিলেন এবং পরে তা শোধও করেন। কিন্তু টাকা শোধ করার পর তার বন্ধু তাকে জানায় যে টাকা সে শোধ করেছে তা হল “আসল” এবং এর ওপর যে “সুদ” তাও প্রায় লাখ খানেক হয়ে গেছে তত দিনে যা তাকে শোধ করতে হবে। কিন্তু রুদ্রভৈরব সেই সুদের টাকা সময়মতো শোধ করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার তার গ্রামের বাড়ি থেকে বর্ধমানের কাটোয়ার দিকে যাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। যাবার পথেই তাকে আটক করে তার বন্ধু আর তার বন্ধুর এক সহকারী ।মোটরসাইকেলে করে আসে তারা। তারপর জোর করে কিছু একটা তাকে খাইয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে অর্ধচেতন হয়ে পড়েন রুদ্র বাবু। তখন তার হাত-পা বেঁধে তার দুই বন্ধু তাকে রেললাইনের ধারে ফেলে দিয়ে আসে। পরে অন্ধকারে দুরন্ত গতিতে যখন ট্রেন আসতে থাকে তখন ট্রেনের চালক তাকে দেখতে না পেয়ে তার পায়ের উপর দিয়ে ট্রেন চালিয়ে দেয় ।ফলে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তার দুই পা। তার বাঁ পা পুরোটাই বাদ গেছে এবং ডান পা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ।
আজ শুক্রবার হাসপাতালে শুয়েই তিনি পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ” আমি এক বন্ধুর কাছ থেকে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেই টাকা আমি শোধ করেও দিয়েছিলাম কিন্তু ওরা সুদের বোঝা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। তাও প্রায় লাখ খানেক টাকা। যা আমি সময় মত দিতে পারিনি। তাই গতকাল যখন ফিরছিলাম বাড়ি তখন মোটরসাইকেলে করে ওরা দুজন আসে। আমাকে কিছু একটা খাইয়ে দেয়। তারপর আমি অর্ধচেতন হয়ে পড়ে তখনি ওরা আমার হাত পা বেঁধে নিয়ে আমাকে ফেলে দিয়ে আসে।” ঈদের মধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে পুলিশ যদিও আহত ব্যক্তির পরিবারের তরফ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ এখনো পর্যন্ত দায়ের করা হয়নি ওই দুই অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে।