বাংলাহান্ট ডেস্কঃ করোনা পর্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী (Mamata Banerjee) রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ওঠার ডাক দিলেও তাতে কতটা সাড়া মিলেছে সেটাও সকলেরই জানা। উত্তরবঙ্গের এক প্রত্যন্ত এলাকা জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ (Rajganj) পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল (TMC) কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রৌশন হাবিব আর সন্ন্যাসিকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সৌকত আলি রবিবার যে উদাহরণ তৈরি করলেন সেটা সম্ভবত গোটা রাজ্যেই নজির হয়ে থাকবে। এদিন এই দুই পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতা একযোগে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সড়কের রাধাবাড়ি এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবারের ব্যবস্থা করলেন।
কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। কোনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শ্রমিকদের বাসে করে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থাও করেছেন। বাস্তব চিত্র হল, তার পরেও শ্রমিকদের জাতীয় সড়ক ধরে হেঁটে বাড়িতে ফেরার স্রোতে বিরাম নেই। এখনও অন্তত কয়েক হাজার শ্রমিক শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সড়ক ধরে জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার-কোচবিহারে ফিরছেন। অনেকেই গত চব্বিশ ঘণ্টা পথে কিছু খাননি। রবিবার পথে এমন অযাচিত খাবারের আহ্বানে সকলেই বিহ্বল হয়ে পড়েন। কেউ কেউ চোখের জলও মুছলেন। পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ অবশ্য এদিন তাঁদের লঙ্গরখানায় শ্রমিকদের ভিড় দেখে কিছুটা লজ্জিত।
তাঁর উপলব্ধি, এমন লঙ্গরখানা আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘রোজই দেখছি রাস্তা দিয়ে শয়ে শয়ে শ্রমিক হেঁটে যাচ্ছে। সঙ্গে থাকা বাচ্চারা খিদেয় কাঁদছে। কী করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত সিপিএমের পঞ্চায়েত সৌকতকেই প্রস্তাব দিই, চল দু’জনে মিলে কিছু একটা করি। আমাদের আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল।’ সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের সাফ যুক্তি, ‘রাজনীতি করার অনেক সময় পাব। কিন্তু মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এখন যদি মানুষের পাশে না থাকি, তাহলে কবে থাকব? রৌশন হাবিব তৃণমূল করলেও ওঁর প্রস্তাবে তাই না-করিনি।’ রবিবার সাত সকালে তাই দুজনে মিলে নেমে পড়েন মাঠে। প্রথমে পঞ্চাশ কেজি চাল জোগাড় করেন। তার পর পরিচিত বন্ধুদের মাধ্যমে যোগাড় করেন সব্জি। দুপুরের মধ্যেই রেডি খিচুড়ি আর তরকারি। দুই নেতার এমন উদ্যোগে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি রাজগঞ্জ থানার পুলিশ কর্মীরাও।
করোনা ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে রাজগঞ্জ থানার উদ্যোগেই রাধাবাড়িতে চলছে স্ক্রিনিং ক্যাম্প। ফলে স্ক্রিনিংয়ের জন্য সেখানে শ্রমিকদের দাঁড়াতেই হচ্ছে। খিদে ও পথ শ্রমে অনেকে বসে পড়ছেন সেখানে। তবে খাবারের এমন আয়োজন দেখে দলে দলে শ্রমিকেরা ভিড়ও করেছেন। কোচবিহারের বাসিন্দা কেশব রায় ফিরছেন চেন্নাই থেকে। গত চব্বিশ ঘণ্টা রাস্তায় কিছুই খাননি। তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএমের দুই নেতার এমন উদ্যোগে অবাক তিনিও। কেশব রায় বলেন, ‘দুই দলের মধ্যে তো বনিবনা নেই শুনি। ফলে দুই নেতার এমন উদ্যোগের কথা শুনে একটু অবাকই হলাম।’ রাজনৈতিক লড়াই ফেলে তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএমের দুই নেতার পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর এমন উদ্যোগে খুশি পুলিশ কর্মীরাও। এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘রাজনীতির মূল কথা তো মানুষের সেবা করা। সঙ্কটের সময়ে নেতারা এটা বুঝে গেলে আমাদেরও তো পরিস্থিতি সামাল দিতে সুবিধে হয়।’