ব্যাটে-বলে দুরন্ত হার্দিক পান্ডিয়া, টানটান উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের পর পাকিস্তান বধ ভারতের

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের শুরুটা জয় দিয়েই করলো রোহিত শর্মার ভারত। পিচে বোলারদের জন্য সাহায্য ছিল, দুই দলের ব্যাটিং এর সময় সেটা বোঝা গিয়েছে। তাই পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে করা ১৪৭ রানের লক্ষ্য ছুঁতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে বিরাট কোহলিদের। কিন্তু দিনের শেষে ভারত যে পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ ২০২২-এ নিজেদের যাত্রা শুরু করল তার মূল কারণ হার্দিক পান্ডিয়া। প্রথম ইনিংসে বল হাতে এবং তারপর রান তাড়া করতে নেমে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ১৭ বলে ৩৩ রানের সাহসী ইনিংস খেলে ভারতকে জয় এনে দেন তিনি।

পিচে যে বোলারদের জন্য সাহায্য ছিল তা দুই দলের ব্যাটিং এর সময় বোঝা যায়। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত বোলিং করা ভুবনেশ্বর কুমার ম্যাচের মাঝের বিরতিতে এসে বলে যান যে পিচ ব্যাটারদের পক্ষে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। পিচে নিঃসন্দেহে বোলারদের জন্য বাউন্স আছে। কিন্তু কোনও কোনও বল একই লেংথ থেকে ভিন্ন আচরণ করছে। ভুবনেশ্বর কুমার জানিয়েছিলেন যে তার মতে তারা শুরুর দিকে যেমন বোলিং করেছিলেন সেই হিসেবে ১৫ রান বেশি দিয়ে বসেছিলেন।

   

টসে হেরে যখন প্রথমে পাকিস্তানকে ব্যাটিং করতে পাঠান রোহিত শর্মা, তখন হয়তো অনেকেই আশা করতে পারেননি যে বাবর আজমকে দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে। একাধিক বার ফ্রন্টফুটে আউট সুইংয়ে পাকিস্তান অধিনায়ককে বিট করার পর ভুবনেশ্বর কুমার আচমকা শর্ট বল দিয়ে তাকে ফাইন লেগে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন। ম্যাচে ভালো বলি না করলেও পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই ফখর জামানকে ফিরিয়ে ভারতকে সুবিধাজনক জায়গায় এনে দিয়েছিলেন আবেশ খান। এরপর মহম্মদ রিজওয়ান (৪৩) এবং ইফতিকার আহমেদ (২৮) মাঝের ওভার গুলোতে বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যাটিং করে পাকিস্তানকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার শর্ট বলের শিকার হয়ে দুজনেই ফিরে যেতে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে যায়। শেষদিকে শেহেনোয়াজের ৬ বলে ১৬ রানের ক্যামিওতে ভর করে ১৯.৫ ওভারে ১৪৭ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। অসাধারণ বোলিং করেন ভুবনেশ্বর কুমার (৪/২৬) ও হার্দিক পান্ডিয়া (৩/১৮)।

1661711464681

ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের হয়ে আজকেই টি-টোয়েন্টি অভিষেক করা নাসিম শাহের বলে প্রথম বলেই আউট হয়ে ফেরেন লোকেশ রাহুল। সেই ওভারেই ক্যাচ পড়ে বিরাট কোহলির। সেই সময় পাকিস্তানি বোলারদের সামনে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলেন রোহিত শর্মা ও কোহলি। বিরাট কোহলি আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরতে শুরু করলেও রোহিত শর্মা অতিরিক্ত বল খেলছিলেন। তাই চাপে পড়ে মহম্মদ নওয়াজের ওভারে একটি ছক্কা আসার পরও অতিরিক্ত আগ্রাসী হয়ে আবারো ছয় মারতে গিয়ে আউট হন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত (১৮ বলে ১২)। বিরাট কোহলিকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি আবার সেই পুরনো ছন্দে ফিরে এসেছেন। ঔদ্ধত্য সাথে পাকিস্তানের পেসারদের বলে পুল, কাট মারছিলেন তিনি। কিন্তু তিনিও দশম ওভারে নওয়াজের বলে অপ্রয়োজনীয় ভাবে আগ্রাসী হতে গিয়ে নিজের উইকেট ছুড়ে আসেন। ভারত তখন ৫৩ রানে হারিয়েছে ৩ উইকেট। কোহলি আউট হয়েছেন ৩৪ বলে ৩৫ রান করে।

এরপর ধীরে ধীরে ইনিংস কে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন সূর্যকুমার যাদব এবং রবীন্দ্র জাদেজা। রোহিত আউট হওয়ার পর জাদেজাকে পাঠানো হয়েছিল রানের গতি বাড়ানোর জন্য। কিন্তু তাঁকে পুরো অন্য ভূমিকায় পারফরম্যান্স করতে হচ্ছিল। সূর্যকুমার যাদব ১৮ রান করে নাসিম শাহের বলে আউট হওয়ার পর ভারতের ওপর চাপ আরও বাড়তে থাকে। কিন্তু এই সময়ে মাঠে নেমে জাদেজার সাথে মিলে ভারতের ওপর থেকে চাপ কমানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন হার্দিক পান্ডিয়া। পায়ের পেশিতে টান নিয়েও দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকা নাসিম শাহের (২/২৭) শেষ ওভারে জাদেজা ১০ রান করার পর পরের ওভারে অভিজ্ঞ হ্যারিস রাউফকে তিনটি বাউন্ডারি মারেন হার্দিক। ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কারণ জয়ের জন্য ভারতকে শেষ ৬ বলে করতে হতো ৭ রান। কিন্তু ওভারের প্রথম বলেই জাদেজা বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। নবাগত দীনেশ কার্তিক প্রথম বলে ১ রান নিয়ে হার্দিককে স্ট্রাইক দেন। ওভারের তৃতীয় বলে কোন অর্ডার না পেলেও চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে ২ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে দেন হার্দিক।

Avatar
Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর