ভেঙে পড়েছে লেডিস টয়লেট, নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম! কঙ্কালসার স্কুল নিজের টাকায় সাজাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক 

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ যত দিন যাচ্ছে ততই ভেঙে পড়ছে রাজ্যের (West Bengal) শিক্ষা পরিকাঠামো। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে কার্যত ধুঁকছে রাজ্যের বহু সরকারি স্কুল। প্রকৃত অর্থে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা যে কতটা শোচনীয় সেটাই এবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মেদিনীপুর জেলার জনপ্রিয় স্কুল ‘বহলিয়া জুনিয়র হাইস্কুল’। উপযুক্ত পরিকাঠামোর দাবিতে একাধিক জায়গায় আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। তাই সন্তানসম ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে এবার সম্পূর্ণ নিজের টাকায় বিদ্যালয়ের কক্ষ তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

নিজের খরচে স্কুল সাজাচ্ছেন রাজ্যের (West Bengal) এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক

বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের (West Bengal) মাধ্যমিক হোক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক জেলাভিত্তিক পরীক্ষার ফলাফলের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। একেবারে প্রথম সারিতে নাম থাকা সত্ত্বেও শিক্ষায় অগ্রণী এই জেলার এক একটি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো অত্যন্ত শোচনীয়। এখানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যে বিদ্যালয়ের কথা হচ্ছে সেখানে না আছে পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, না আছে লেডিস টয়লেট। যার ফলে একাধিক সমস্যার কারণে দিনের পর দিন চরম হয়রানি হচ্ছে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলেরই।

জানা যাচ্ছে, এগরা ১ ব্লকে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি পরিকাঠামোর অভাবে কার্যত ভগ্নপ্রায়। প্রথমত শ্রেণিকক্ষে বড়ই অভাব রয়েছে এই স্কুলে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে, অথচ আশেপাশে আর কোন উচ্চ বিদ্যালয় নেই। যার ফলে এই স্কুলের নবম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা কার্যত বিনা পয়সায় এই বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন করতে আসেন। অন্যদিকে ক্লাসরুমের অভাবে এই স্কুলের এক একটি শ্রেণিকক্ষে দুই তিনটি শ্রেণীর পঠন পাঠন হয়। তাতেও জায়গা কুলোয় না ছাত্র-ছাত্রীদের। তাই উপায় না পেয়ে বারান্দাতেই চাটাই বিছিয়ে চলছে পড়াশুনো।

এগরা পশ্চিম চক্রের এই স্কুলে বহলিয়া, বরিশা,জুকি,মুণ্ডমারাই ও বলিহারপুর সহ প্রায় ৬টি গ্রামের প্রায় দেড়শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে। জানা যাচ্ছে, এই বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। অথচ ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়ের একমাত্র লেডিস টয়লেট। ফলে ছাত্রী থেকে শিক্ষিকা সকলেই ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।

প্রধান শিক্ষককে নিয়ে এই বিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষকদের সংখ্যা তিন জন। কিন্তু তিনজনের পক্ষে এত ছাত্রছাত্রী সামাল দেওয়া মুশকিল। তাই এই অসময়েও মুশকিল আসনে ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেই কারণেই গ্রামের তিনজন বেকার যুবক এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে অস্থায়ী পার্শ্ব শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি তাঁদের প্রাপ্য সম্মানিকের অর্থ-ও নিজের বেতন থেকেই দেন তিনি।

আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যেই সোনার ফসল ফলবে বাংলায়! অভিনব উদ্যোগ রাজ্যের

এখানেই শেষ নয় ছাত্র-ছাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবে প্রধান শিক্ষক নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ৭ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত লোন করেছেন। ওই টাকা দিয়ে  স্কুলের দোতলায় একটি ক্লাস রুম তৈরী করেছেন তিনি। নিজের বেতন থেকেই প্রত্যেক মাসে সেই লোনের টাকা পরিশোধ করছেন প্রধান শিক্ষক। এখন স্কুলের শ্রেণিকক্ষ বেড়ে হয়েছে তিনটি। যদিও তাতেও মেটেনি সমস্যা। তবে প্রধান শিক্ষকের এমন ভূমিকায় বেজায় খুশির স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

West Bengal

প্রসঙ্গত সমস্ত অভাব অভিযোগ নিয়ে গত ২০২২ সাল থেকে প্রশাসনিক মহলে আবেদন জানিয়ে আবেদন নিবেদন করতে শুরু করেছিলেন এই বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজও কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। জানা যাচ্ছে, এই বিদ্যালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত পানিপারুল মুক্তেশ্বর হাইস্কুল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার মাইতি এগরা বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক। এই বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিধায়ক প্রশাসন যাতে ব্যবস্থা নেন তার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাপস দে তাঁর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর