বাংলাহান্ট ডেস্ক : ‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় পর্দায় ‘ফেলুদা’ ছবি বলতে এই দুটিই। ফেলুদার স্রষ্টার কল্পনায় প্রদোষ মিত্র ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, জটায়ু সন্তোষ দত্ত এবং তোপসে (Topshe) সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই ত্রিমূর্তিকেই দেখা গিয়েছিল সত্যজিতের দুই ছবিতেই। সৌমিত্র এবং সন্তোষ দত্ত তো অতি পরিচিত মুখ, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও তোপসে (Topshe) হিসেবে আপন করে নিয়েছিল বাঙালি দর্শক। কিন্তু তিনি তোপসে হয়ে উঠলেন কীভাবে?
সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তোপসে (Topshe) হওয়ার গল্প
এক সাক্ষাৎকারে সেই মজার কাহিনি শুনিয়েছেন সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিৎ নাকি নিজের ছবির জন্য শিশুশিল্পীর দরকার হলেই খোঁজ করতেন পাঠভবন স্কুলে। সিদ্ধার্থ পড়তেনও সেখানে, কিন্তু তোপসের (Topshe) জন্য তাঁর নাম পাঠানোই হয়নি! অভিনেতার কথায়, সে সময় তিনি ছিলেন রোগা, চুল একেবারে ছোট ছোট। কোনো দিক থেকেই তোপসের মতো না। কিন্তু ভাগ্যে থাকলে খণ্ডাবে কে! তোপসে চরিত্রটি আপনা থেকেই এসে ধরা দিয়েছিল তাঁর কাছে।
আরো পড়ুন: বলিউডের সঙ্গে গভীর যোগ, মুম্বইয়ের ত্রাস এই ৬ গ্যাংস্টার এখন কোথায়?
গিয়েছিলেন খোদ সত্যজিতের বাড়িতে
সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর স্কুলের এক স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সত্যজিৎ রায়ের। তাঁর বাড়িতে ব্যাকরণ বুঝতে গিয়েই ঘটে যায় চমৎকার। সিদ্ধার্থকে দেখে সেই মাস্টারমশাইয়ের মনে হয়, এই তো তোপসের (Topshe) জন্য উপযুক্ত! ব্যস, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পৌঁছে যান সোজা সত্যজিতের বাড়িতে। মজার ব্যাপার হল, কিংবদন্তি পরিচালককে সিদ্ধার্থ তখন চিনতেনই না। তবে একা সত্যজিৎ নয়, সেখানেই প্রথম সৌমিত্রকেও তিনি সামনাসামনি দেখেন। সিদ্ধার্থর কথায়, এত বড় একজন স্টারকে চোখের সামনে দেখে তাঁর তখন ‘স্ট্যাচু’ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
আরো পড়ুন: মুখের একদিক প্যারালাইজড! ভুল সার্জারিতে ঘটে গেল চরম বিপর্যয়! সোশ্যাল মিডিয়ায় কী বললেন আলিয়া?
কী বলেছিলেন পরিচালক
তারপর চলতে থাকে প্রশ্ন উত্তর। কিশোর সিদ্ধার্থ কী কী ডিটেকটিভ গল্প পড়েছেন, ফেলুদা পড়েছেন কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন সত্যজিৎ। ফেলুদা পড়েননি শুনে সেখানেই বসে গল্পের ছলে তাঁকে ব্রিফ করে দিয়েছিলেন পুরোটা। তারপরেই চমকের পালা। সোনার কেল্লা গল্পটি নিয়ে তিনি ফিল্ম বানাচ্ছেন শুনেই থতমত সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি তো জানতেনই না সত্যজিতের আসল পরিচয়। উপরন্তু তিনি তোপসে (Topshe) হবেন শুনে আরো এক প্রস্থ অবাক হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়।
তবে অভিনেতা বলেন, সত্যজিতের চাইল্ড সাইকোলজি নাকি ছিল মারাত্মক ভালো। শিশুমন খুব ভালো বুঝতেন তিনি। তাই সহজ করে বুঝিয়ে সিদ্ধার্থকে ছবির জন্য রাজি করিয়ে নেওয়াও তাঁর কাছে ছিল বাঁ হাতের খেল। শুটিংয়ের সময়ও নাকি তাঁদের সঙ্গে লুডো, তাস খেলতেন সত্যজিৎ রায়। পর্দার কিশোর তোপসে এখন পৌঁছেছেন প্রৌঢ়ত্বে। কিন্তু সেই সব স্মৃতি আজো তাঁর মনে জ্বলজ্বলে। ‘অমন মানুষ আর পাওয়া যাবে না’, সত্যজিতের বিষয়ে এমনটাই মত সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।