দাম ২০৮৭ কোটি টাকা! যার কাছে গিয়েছে নেমে এসেছে অভিশাপ, ভারত থেকে কীভাবে পৌঁছল আমেরিকায়?

   

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশ ভারতবর্ষ (India) একটা সময়ে ছিল রত্নের ভান্ডার। সোনা-রুপো থেকে শুরু করে হিরে এবং অন্যান্য মূল্যবান রত্নেরও ভান্ডার ছিল এই দেশ। যদিও, বারংবার বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি ভারতের লুটপাট চালানোর ফলে বহুমূল্যবান রত্ন হাতছাড়া হয়েছে ভারতের। এমনিতেই কোহিনুর হিরের বিষয়ে আমরা তো সবাই জানি। কিন্তু, আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একটি মূল্যবান রত্নের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যেটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। সবথেকে অবাক করার মতো বিষয় হল ওই হিরের সাথে একাধিক অভিশপ্ত ঘটনাও জুড়ে গেছে। ওই হিরেটির নামেও রয়েছে চমক। যেটি সমগ্র বিশ্বে “হোপ ডায়মন্ড” (Hope Diamond) নামে পরিচিত।

ওই হিরের রং এবং শোভা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। বহু দেশ ঘোরার পর বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হয়ে “হোপ ডায়মন্ড” বর্তমানে রয়েছে আমেরিকার এক সংগ্রহশালায়। এই বিশেষ হিরের বর্তমান মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় ২,০৮৭ কোটি টাকা বলে জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, হিরেটির আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে তার নীলাভ আভায়। এদিকে, প্রথমে “হোপ ডায়মন্ড” পরিচিত ছিল “ফ্রেঞ্চ ব্লু” হিসেবে। বলা হয় যে, এই বহুমূল্যবান হিরের উৎপত্তি আমাদের দেশেই। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার কল্লুর খনিতে খননের সময় সন্ধান মিলেছিল “হোপ ডায়মন্ড”-এর। সেই সময়ে ওই হিরের ওজন ছিল ২৩ গ্রাম। এমতাবস্থায়, ১১৫ ক্যারাটের “হোপ ডায়মন্ড”-কে প্রত্যক্ষ করে অবাক হয়েছিলেন সকলেই।

How did the Hope Diamond reach America from India.

এদিকে, ভারত থেকে এই হিরে কিনে ফ্রান্সে ফিরে গিয়েছিলেন ফরাসি পর্যটক জঁ ব্যাপ্টিস্ট ট্যাভার্নিয়ের। জানা যায়, তিনি একজন গহনা ব্যবসায়ী ছিলেন। তারপরে ফ্রান্সের তৎকালীন রাজা চতুর্দশ লুইয়ের কাছে সেটি বিক্রি করে দেন ট্যাভার্নিয়ের। যেটি শোভা পেত রাজার মুকুটে। তবে, কথিত আছে যে ওই হিরেটি রাজার কাছে আসার পর থেকে তাঁর জীবনে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। সন্তানদের অকাল মৃত্যুর পাশাপাশি রাজা লুই নিজেও দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা যান। যার ফলে তাঁর উত্তরসূরিরা পান এই হিরে। এদিকে, পরবর্তীকালে ষোড়শ লুইয়ের স্ত্রী মেরি অ্যান্তোনেটের নেকলেসে শোভাবর্ধন করেছিল হিরেটি। যদিও, ষোড়শ লুইয়ের জীবনেও নেমে এসেছিল অন্ধকার। ফরাসি বিপ্লবের সময় রাজ পরিবার বন্দি হয়। যার ফলে সমস্ত সম্পত্তি চলে যায় বিপ্লবীদের কাছে।

আরও পড়ুন: সুখবর! এবার ১২ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি অস্থায়ী কর্মীদের, বড় সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের

এরপর বহুদিন পর্যন্ত এই হিরের কোনো সন্ধান না পাওয়া গেলেও ১৮১৩ সালে লন্ডনের বাজারে আচমকাই হিরেটিকে শোরগোল পড়ে যায়। যদিও, সেই সময়ে ওই হিরের ওজন অনেকটাই কমে যায়। শুধু তাই নয়, ওই হিরেটিই “হোপ ডায়মন্ড” কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বের একটি বড় মহল সেটিকে “হোপ ডায়মন্ড” হিসেবেই মেনে নিয়েছিল। ঠিক তার ১০ বছর পর অর্থাৎ ১৮২৩ সালে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ড্যানিয়েল অ্যালিসনের কাছে ওই হিরের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি সেটি বিক্রি করে দেন ইংল্যান্ডের রাজপরিবারে। তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জর্জের কাছে পৌঁছে যায় ওই হিরে। ঘটনাচক্রে ওই হিরে পাওয়ার পর খুব বেশিদিন সুখে থাকতে পারেননি রাজা চতুর্থ জর্জ। একটা সময়ে ঋণের দেয় জর্জরিত হয়ে তিনি ওই হিরে বিক্রি করে দেন বলে জানা যায়। কিন্তু, তিনি কার কাছে সেটি বিক্রি করেন সেই সম্পর্কে মেলেনি কোনো তথ্য।

আরও পড়ুন: ভাবতেও পারবে না কেউ! বন্ধু ইজরায়েলের জন্য কী কী অস্ত্র পাঠাল ভারত? সামনে এল গোয়েন্দা রিপোর্ট

এদিকে, ১৮৩৯ সালে ধনকুবের হেনরি ফিলিপ হোপের সংগ্রহশালাতে দেখতে পাওয়া যায় ওই বিশেষ হিরেটিকে। তাঁর নামেই ওই হিরে নাম হয় “হোপ ডায়মন্ড”। তারপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে “হোপ ডায়মন্ড” পৌঁছে গিয়েছিল নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী সাইমন ফ্র্যাঙ্কেলের কাছে। তারপরেও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঘুরে ১৯১০ সালে “হোপ ডায়মন্ড” কিনে নেন পিয়েরে কার্টিয়ের। পাশাপাশি, ওই হিরের সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন বিভিন্ন অভিশাপের গল্প। তারপর তিনি সেটি আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে ইভিলিন ম্যাকলিন নামের এক অভিজাত ব্যবসায়ীকে ওই হিরে বিক্রি করতে চান। যদিও, ইভিলিনের জীবনেও নেমে আসে বিপর্যয়। মানসিক হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। এদিকে, ইভিলিনের মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি ১৯৪৭ সালে নিলামে তোলা হয়। যেখানে হ্যারি উইনস্টন ইনকর্পোরেট নামে এক সংস্থা ওই হিরেটি কিনে ফেলে। তারপর এক দশক পর অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের ১০ নভেম্বর হিরেটি পৌঁছে যায় ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়ামে। তখন থেকে ওই মিউজিয়ামেই রয়েছে হিরেটি। প্রতিবছর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ হিরেটিকে দেখতে আসেন। এদিকে, “হোপ ডায়মন্ড”-এর সঙ্গে জড়িত অভিশাপের কাহিনিগুলি মানতে নারাজ স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। বরং, ওই মিউজিয়ামের গবেষক রিচার্ড কিউরিন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ওই সমস্ত কাহিনি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং সেগুলি পিয়েরের মস্তিষ্কপ্রসূত।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর