বাংলাহান্ট ডেস্ক : গত চার বছরে ৩৩৯৯ টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাক্ষী হয়েছে ভারত। এবার এহেন ভয়াবহ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্যই ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। মঙ্গলবার লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর এবং বিজপি সাংসদ চন্দ্র প্রকাশ জোশী দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে সওয়াল করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গণপিটুনির মতন ঘটনাগুলির কি হিসেব এবং পরিসংখ্যান রাখছে সরকার, তাঁরা প্রশ্ন তোলেন এই ব্যাপারেই। আর তার জবাবেই এই সম্পর্কিত বিশদ পরিসংখ্যাণ তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তবে দাঙ্গার হিসেব দিলেও গণপিটুনির তথ্য যে আলাদা ভাবে রাখে না সরকার, তেমনটাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এই তথ্য জানানোর জন্য ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর একটি প্রতিবেদনের সাহায্য নেন তিনি। সেই প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে সরাসরি জানান,’ ২০২০ সালে দেশে মোট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে ৮৫৭ টি। ২০১৯ সালে তা ছিল বেশ অনেকটাই কম। মাত্র ৪৩৮ টি, ২০১৮ সালে সংখ্যাটা ছিল ৫১২ টি, ২০১৭ সালে ৭২৩টি এবং ২০১৬ সালে ৮৬৯টি। ‘
দুই সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও জানান যে, ‘২০২০ সালে ৫১ হাজার ৬০৬ টি, ২০১৯ সালে ৪৫ হাজার ৯৮৫টি, ২০১৮ সালে ৫৭ হাজার ৮২৮টি, ২০১৭ সালে ৫৮ হাজার ৮৮০ টি এবং ২০১৬ সালে ৬১ হাজার ৯৭৪ টি দাঙ্গার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে দেশজুড়ে।’ যার মধ্যে কার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিসংখ্যাণ আগেই দেওয়া হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, দেশে দলিতদের উপরে অত্যাচারের হিসেবও প্রকাশ করেছে কেন্দ্র সরকার। জানানো হয়, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল অবধি মাত্র ৩ বছরে দলিত অত্যাচারের কারণে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা, ৪৯০৬৪, ৫৩৫১৫ এবং ৫৮৫৩৮টি। যার মধ্যে যোগী রাজ্যেই দায়ের হয়েছে এই তিন বছরে ৩৬ হাজার ৪২৩ টি মামলা। ফলে দলিত অত্যাচারে প্রথম স্থানে বিজেপি শাসিত যোগীর গড়ই বটে। এই স্থানে অবশ্য দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রাজস্থান এবং বিহার, পঞ্চমে মহারাষ্ট্র। এই তালিকায় কোথাও নেই বাংলার নাম।
এই বিপুল পরিমাণ দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে সরকারের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন ওই মন্ত্রী। রাই বলেন, ‘বর্তমান ফৌজদারি আইনগুলিকে ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করা এবং তাদের সমসাময়িক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাথে প্রাসঙ্গিক করে তোলার পাশাপাশি সমাজের দুর্বল অংশগুলিকে দ্রুত বিচার প্রদান করা এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক একটি আইনি কাঠামো তৈরি করা সরকারের উদ্দেশ্য।’
মোদীর শাসনকালে বিজেপি আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সন্ত্রাস, দলিত নির্যাতনের মতন ঘটনা বেড়েছে দেশে। দলিত নির্যাতনে প্রথমের ‘শিরোপা’ বিজেপির গড় উত্তরপ্রদেশের মাথাতেই। দলিত অত্যাচারে প্রথম পাঁচটি রাজ্যই গোবলয়। ফলে এই পরিসংখ্যাণের সূত্র ধরে বিজেপিকে বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের দাবি,’সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ তো দূর, বরং অত্যাচার এবং দাঙ্গাই বাড়ছে দেশে। এহেন পরিসংখ্যান সামনে আসায় যে বেশ অস্বস্তিতেই পড়েছে কেন্দ্রীয় শাসক দল তা বলাই বাহুল্য।