বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্যের জেরে শুক্রবার তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Abhijit Gangopadhyay) শো-কজ় করেছিল নির্বাচন কমিশন (Election Commission Of India)। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এবার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য অভিজিতের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন। আর নির্বাচন কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞায় ফুঁসছেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কমিশনের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য কমিশনে আর্জি জানাবেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন অভিজিৎ। এই বিষয়ে প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কমিশনকে জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলাম, যদি কোনও পদক্ষেপ করা হয়, তার আগে যেন অন্তত অতিরিক্ত জবাব দেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু কোনও সুযোগই দেওয়া হয়নি। তার আগেই কমিশন এই নির্দেশ দিয়েছে।’’
পদ্মপ্রার্থী আরও বলেন, ‘‘অন্য লোকের মান আছে, রেখা পাত্রের মান নেই, আমার মান নেই, তা তো হতে পারে না!’’ দরকারে কমিশনের এই নির্দেশ খারিজ করার আর্জি জানিয়ে আদালতে যাবেন বলেও সাফ জানিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি। প্রসঙ্গত, দিন দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে। বুধবার হলদিয়ার চৈতন্যপুরে একটি সভা করেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থীর। যেই সভার এক ভিডিও সম্প্রতি শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে অভিজিৎকে বলতে শোনা যায়, ”তৃণমূল বলছে, রেখা পাত্রকে কেনা হয়েছিল ২০০০ টাকায়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তোমার হাতে কেউ ৮ লক্ষ টাকা গুঁজে দিলে চাকরি হয়, কেউ ১০ লক্ষ টাকা দিলে রেশন হাওয়া হয়ে যায়! কেন তোমার দাম ১০ লক্ষ টাকা? তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখে মেকআপ করাও বলে? আর রেখা পাত্র গরিব মানুষ, লোকের বাড়িতে কাজ করে, সে আমাদের প্রার্থী। সে জন্য তাকে ২০০০ টাকায় কেনা যায়?”
আরও পড়ুন: হামলাকারীকে ‘ছাড়’, উল্টে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধেই জামিন অযোগ্য ধারা পুলিশের
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে নি বাংলা হান্ট। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এহেন ‘কুরুচিকর’ মন্তব্যের জন্য অভিজিতের বিরুদ্ধে কমিশনের দ্বারস্থ হয় তৃণমূল। দলের দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অশালীন’ ভাষায় আক্রমণ করে ‘নিম্নরুচি’র পরিচয় দিয়েছেন পদ্মপ্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি মামলা শুরু করতে হবে কমিশনকে। এরপরই পদক্ষেপ করে কমিশন।
এর আগে কমিশন তরফে সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে অভিজিৎকে তার ওই আচরণের কারণ দর্শানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি কেন ওই মন্তব্যের জন্য অভিজিতের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে না সেবিষয়েও জানাতে বলা হয়েছিল। সেই মত নির্বাচন কমিশনের শো-কজ়ের জবাবও দিয়েছেন অভিজিৎ। সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিজিৎ বলেছিলেন, ”যা ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে আমি কমিশনে জানাচ্ছি।” কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই জবাব পাঠাব। যা ঘটেছে এবং যে ভাবে ঘটেছে, তা আমি কমিশনকে জানাব।”
কমিশনের নির্দেশ মতই ২০ তারিখ জবাব পাঠান অভিজিৎ। সূত্রের খবর, জবাব খতিয়ে দেখার পরেও কমিশনের মনে হয়েছে, ‘কুরুচিকর ভাবে ব্যক্তি আক্রমণ’ করেছেন অভিজিৎ। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন বিজেপি প্রার্থী। ভারতীয় সমাজে এবং সংবিধানে মহিলাদের বিশেষ স্থান রয়েছে। সর্বদা সম্মানের চোখে তাদের দেখা হয়। সে কারণে এক জন মহিলার সম্মানরক্ষার জন্য রাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সব সময়ই সচেষ্ট।