বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি, চাষাবাদের (Agriculture) ক্ষেত্রেও এই রেশ বজায় রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে অনেকেই গতানুগতিক ভাবে ধান-গমের মত খাদ্যশস্যের চাষ না করে চাহিদার ওপর ভর করে নতুন নতুন চাষের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। যেগুলির মাধ্যমে তাঁরা বিপুলভাবে লাভবানও হচ্ছেন। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্ৰতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে সেইরকমই এক পরিচিত লাভজনক চাষের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব।
মূলত, কুদরি চাষ হল এমন একটি চাষ যেটি আপনি একবার চাষ করেই ৩ থেকে ৪ বছর যাবৎ ফসল পেতে পারেন। যার ফলে মাত্র একবার পরিশ্রম করেই আপনি বছর বছর লাভবান হবেন। অপেক্ষাকৃত গরম এলাকায় এই চাষের মাধ্যমে সারা বছরই ফসল পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা রয়েছে এমন অঞ্চলে মাত্র ৭-৮ মাস ফসল পাওয়া যায়। কারণ, ওই মরশুমে ফলন কম হয়। এদিকে, আপনি যদি মাচা তৈরি করে কুদরি চাষ করেন সেক্ষেত্রে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
এইভাবে মিলবে ভালো ফলন: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বেলে-দোআঁশ মাটি যুক্ত জমি কুদরি চাষের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ, এই মাটিতে কুদরির ফলন খুব ভালো হয়। তবে, জমির pH যেন ৭-এর বেশি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কুদরি চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। মূলত, ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে এই চাষ সবচেয়ে ভালো হয়।
পাশাপাশি, যখন আপনি এই ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করবেন, তখন যদি সেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে গোবর সার বা ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে দিতে পারেন তাহলে এই চাষ খুবই ভালো হবে। উল্লেখ্য যে, কুদরি চাষের ক্ষেত্রে ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজন হয় উন্নত জাতের বীজের। এই চাষে রোপণের জন্য প্রথমে বীজ থেকে নার্সারি তৈরি করে তারপরে রোপণ করতে হয়।
আরও পড়ুন: ৬ মাসেই পয়সা ডবল! এবার বাজার কাঁপাচ্ছে এই কোম্পানির শেয়ার, কেনার জন্য লাইন লাগাচ্ছেন ক্রেতারা
প্রথম রোপণের জন্য বর্ষাকাল উপযুক্ত: বৃষ্টিতে এই গাছ বপন করলে সহজেই শিকড় মাটিকে ধরে নেবে এবং দ্রুত বাড়তে শুরু করবে। এমতাবস্থায়, যখন গাছ লতার আকার ধারণ করবে তখন প্যান্ডেল পদ্ধতির মাধ্যমে বাঁশ ও তারের সাহায্যেমাচা তৈরি করতে হয়। কুদরি চাষের ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে ৪ থেকে ৫ দিনের ব্যবধানে সেচ প্রয়োজন। তবে, শীতকালে ৮ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে সেচ প্রয়োজন হয়। চারা রোপণের ২ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ফসল প্রস্তুত হয়ে যায়। অর্থাৎ, আপনি ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে প্রথমবার এটি সংগ্রহ করতে পারবেন। এরপরে, আপনি প্রতি ৪ থেকে ৫ দিন অন্তর নিয়মিত ভাবে ফসল পেতে থাকবেন।
আরও পড়ুন: বড় পদক্ষেপ! এবার রাজ্যবাসী পাবেন বিনামূল্যে ডায়ালিসিস পরিষেবা, মিলবে এই হাসপাতালগুলিতে
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: জানিয়ে রাখি যে, কুদরি হল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন-এ এবং সি দ্বারা সমৃদ্ধ। কুদরি নিয়মিতভাবে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাশাপাশি, এটি হার্ট এবং কিডনির জন্যও স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়। যাঁরা ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্যও কুদরি অত্যন্ত উপকারী।
লাভের পরিমাণ: এই চাষের ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে আপনি ৩০০ থেকে ৪৫০ কুইন্টাল পর্যন্ত কুদরি উৎপাদন করতে পারেন। খুচরো বাজারে প্রতি কেজিতে কুদরি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় এবং পাইকারি বাজারে প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এমতাবস্থায়, আপনি যদি প্রায় ৪০০ কুইন্টাল ফসলকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন, তাহলে আপনি ১৬ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, একবার বীজ বপনের পর প্রায় ৪ বছর ধরে এই চাষে ফসল পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি চাইলে এই চাষের মাচার নিচের জমিতে আদা-হলুদ জাতীয় ফসলও লাগাতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি দ্বিগুণ আয় করতে পারবেন।