কমতে চলেছে শুল্কের বোঝা? কোন দিকে মোড় নিল ভারত-আমেরিকার বাণিজ্য আলোচনা?

Published on:

Published on:

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত-আমেরিকা (India-America) সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝেই নতুন দিক খুলল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক কার্যত সংকটের মুখে পড়েছিল। এর মধ্যেই ১৬ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করলেন সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ (Brendan Lynch)। আলোচনার পর মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বৈঠককে “ইতিবাচক” বলে বর্ণনা করেন। তিনি জানান, উভয় দেশই ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নিয়ে গঠনমূলক মতবিনিময় করেছে। তবে ভারত সরকারের সূত্রে বলা হয়েছে, এটি পূর্ণাঙ্গ ষষ্ঠ দফা আলোচনা নয়, বরং পরবর্তী চুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শুল্কযুদ্ধের আবহে বৈঠকে ভারত-আমেরিকা (India-America)

প্রসঙ্গত, এর আগে ৩০ জুলাই নয়াদিল্লির রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানা ঘোষণা করে। ২৭ অগাস্ট থেকে নতুন শুল্ক কাঠামো কার্যকর হওয়ার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতির দিকে যায়। মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের রপ্তানি খাতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দিল্লিতে বৈঠক দুই দেশের (India-America) মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:ধসের জেরে বন্ধ কাশ্মীরের হাইওয়ে! ট্রাকেই পচে গেল ৭০০ কোটি টাকার আপেল, মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের

অন্যদিকে, ভারত-মার্কিন (India-America) শুল্ক আলোচনা চলার সময়েই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে পাকিস্তান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইড-লাইনে দেখা করতে পারেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। পাকিস্তানের খাইবার নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠকে ইসলামাবাদের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি, কাতারের উপর ইজরায়েলি হামলার প্রভাব, দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্য ও নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যদিও ইসলামাবাদ বা ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের দূতাবাস এই বৈঠক নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি তথ্য দেয়নি।

ভারত-আমেরিকা (India-America) বৈঠকের হলেও এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকের সময়কাল এবং প্রেক্ষাপটকে ঘিরে কূটনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির সম্প্রতি দু’বার ওয়াশিংটন সফর করেছেন। জুন মাসে তিনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। এর পর জুলাই মাসে ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করে এবং ইসলামাবাদকে তার বিশাল তেল মজুত উন্নয়নে সাহায্যের আশ্বাস দেয়।

In which direction have the India-America trade talks turned
ব্র্যান্ডন লিঞ্চ

আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতিতে নেই ট্রাম্পের ভূমিকা! মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ঝটকা দিয়ে ভারতের সুরেই সুর মেলাল পাকিস্তান

ভারতের (India-America) সঙ্গে শীতল সম্পর্কের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের এই উষ্ণতা নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। মে মাসে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের সময় ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তি হস্তক্ষেপের কৃতিত্ব দেয়। সেই ঘটনার পর থেকেই ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতার পথে এগোতে শুরু করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে একদিকে দিল্লিতে বাণিজ্য আলোচনায় “ইতিবাচক” বার্তা দিচ্ছে আমেরিকা, অন্যদিকে ইসলামাবাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক মার্কিন কূটনীতির বহুমুখী কৌশলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।