ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষের জের, আরও বাড়তে চলেছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম? আশঙ্কায় ভারত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে বর্তমানে যুদ্ধের (Iran-Israel Conflict) পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিকে, সামগ্রিকভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-হামাস সংঘাত এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুথি বিদ্রোহীদের হামলা ইতিমধ্যেই বিশ্বের দেশগুলির ঝামেলা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, ভারতও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এটি যুদ্ধের যুগ নয়। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষ সারা বিশ্বের সাপ্লাই চেনকে ব্যাহত করতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো সমস্যা বাড়াতে পারে। উল্লেখ্য যে, ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব সারা বিশ্বে পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে তেলের দাম এর ফলে বৃদ্ধি পায়।

অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি: পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ইতিমধ্যেই ব্যারেল প্রতি ৯১ ডলারের পর্যায়ে পৌঁছেছে। যা গত ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর। জানিয়ে রাখি যে, ইরান হল বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এমতাবস্থায়, ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ নিলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে তেল উৎপাদনে।

ভারতের ওপর কি প্রভাব পড়বে: বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইরান-ইজরায়েল উত্তেজনা বাড়লে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ভারতও এর ফলে প্রভাবিত হবে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ভারতে নির্বাচনের মরশুমে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম সামান্য কমার সুফল পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু, ইরান-ইজরায়েল সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় এই স্বস্তি হারিয়ে যেতে পারে।

India will be affected by the deterioration of Iran-Israel relations.

ভারত কত তেল আমদানি করে: জানিয়ে রাখি যে, ভারত অপরিশোধিত তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনা ভারতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি, তেল সরবরাহও ব্যাহত হতে পারে। ভারত বর্তমানে প্রায় ৪০ টি দেশ থেকে তার প্রয়োজনীয় তেলের ৯০ শতাংশ আমদানি করে। পাশাপাশি দেশে প্রতিদিন ৫০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল খরচ হয়।

আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য! বৃষ্টির কামালে তপ্ত মরুভূমি হয়ে উঠল সবুজ, ঈদের মাসেই অলৌকিক ঘটনা আরবে

এমতাবস্থায়, আমরা যদি গত অর্থবর্ষের প্রথমার্ধের কথা বলি অর্থাৎ ২০২৩-২৪-এর শুরুতে ভারত রাশিয়া থেকে সর্বাধিক অপরিশোধিত তেল কিনেছিল। এরপর ছিল ইরাক ও সৌদি আরব। ভারতের জন্য ভালো বিষয় হল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর যখন বেশিরভাগ দেশ রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছিল, ভারত তখন ক্রমাগত সস্তা দামে অপরিশোধিত তেল ক্রয় করেছে।

আরও পড়ুন: খেল খতম হবে চিনের! ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যেই বড় পরিকল্পনা ভারতের

ইরান কি সুয়েজ খাল বন্ধ করবে: ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের কারণে সাপ্লাই চেনও প্রভাবিত হতে পারে। কারণ ইরান সুয়েজ খাল বন্ধ করার হুমকি দিয়ে আসছে। উল্লেখ্য যে, সুয়েজ খাল দিয়ে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে খনিজ তেল পাঠানো হয়। একই সময়ে, ভারত এবং অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলি থেকে চা, পাট, তুলা, মশলা এবং চিনির মতো জিনিসগুলি পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির সাথে উত্তর আমেরিকাতে রপ্তানি করা হয়। এদিকে, পশ্চিমী দেশগুলিও এই পথ দিয়ে রাসায়নিক, ইস্পাত, ওষুধ, যানবাহণ ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি পাঠায়। এমতাবস্থায়, এই রুট বন্ধ হলে বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ধরণের ধাক্কা লাগবে। এমনকি, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতিও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর