বাংলা হান্ট ডেস্ক : গতকালই শোনা গেছিল, ইফতারের মতই রাম নবমী পালনের অনুমতি দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University) কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিকভাবেই রামভক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়েছিল খুশির হাওয়া। সেই খুশির রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার গভীর রাতে তা প্রত্যাহার করলেন JU কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, রাম নবমীর (Ram Navami) দিন আয়োজিত শোভাযাত্রার বিরোধীতা করে রেজিস্ট্রারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় কলা বিভাগের এসএফআই নেতৃত্বাধীন বিদায়ী ছাত্র সংসদ আফসু।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রামনবমী পালনের জন্য ১২০ জন পড়ুয়া রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করেছিলেন। যেহেতু যাদবপুর চত্বরে সরস্বতী পুজো, ইফতার ইত্যাদি হয় তাই রাম নবমীতে বাধা দেওয়ার কোনও যুক্তি দেখতে পাননি ভারপ্রাপ্ত কমিটি। একাধিক শর্তের পরিবর্তে রাম নবমী পালন করার অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেটুকুও নাকি মেনে নিতে পারেনি বাম সংগঠনগুলি। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, জোর করে চাপ দিয়ে অনুমতি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে তারা।
সূত্রের খবর, অনুমতি মিলতেই রাম নবমীর বিরোধীতা করে প্রতিবাদ শুরু করে বাম সংগঠনগুলি। আয়োজক পড়ুয়াদের বেশ কয়েকজনকে নাম প্রত্যাহারের জন্য হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। উদ্যোক্তাদের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে দেখে তারা সুরক্ষার আর্জি করে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ ও যাদবপুর থানায় নাকি মেইলও করা হয়। যদিও সদুত্তর আসেনি বলেই অভিযোগ। উল্টে গতকাল রাত ১০টা নাগাদ পাল্টা মেইল আসে, অনুমতি প্রত্যাহার করেছে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন : নির্দিষ্ট তিথিতে রামলালার কপালে উজ্জ্বল ‘সূর্য তিলক’! প্রথম ছবি নিয়ে এল বাংলা হান্ট
তারপর থেকেই কার্যত বিতর্কের মধ্যমণি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্ররা প্রশ্ন তুলছে, ক্যাম্পাসের মধ্যে সাড়ম্বরে ইফতার পালন হতে পারলে রাম নবমী নয় কেন? পুজোর সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ হওয়ার পর অনুষ্ঠান পণ্ড হওয়ায় কার্যত বিষাদের মেঘ রামভক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছে কেউ কেউ। এইদিন আদিত্য পালে নামক এক জনৈক ছাত্র ক্ষোভ মিশ্রিত গলায় বলেন, ‘আমি নিরুপায় হয়ে যাদবপুরের চান্সেলার তথা পশ্চিমবঙ্গের গর্ভনার অফিসে এই সমস্যার সুরাহা চেয়ে ফোন করি। সেখানে আমায় তাদের মেল করতে বলা হয় যা আমি করি। এবং ১৭ তারিখ ফের ফোন করে নিজেদের অভিযোগ ও দুর্দশা গভর্নার অফিসে জানাই।’
আরও পড়ুন : ঘরের মাঠে লজ্জাজনক হার! যে ৩ কারণে কলকাতাকে টেক্কা দিল রাজস্থান
তার আরও সংযোজন, ‘এইরূপ অসহায় পরিস্থিতিতে ১৭ই এপ্রিল সকালে যাদবপুরের গেটের বাইরে পুজো করার জন্য যাদবপুর থানায় মেল করি যাতে তারা আমাদের সুরক্ষা প্রদান করেন। যাদবপুর থানা এইবারেও কোনোরকম সাহায্য আমাদের করেনি। অতএব আমরা পূজা বন্ধ করতে বাধ্য হই।’ এখানেই শেষ নয়, ক্যাম্পাস জুড়ে হিন্দু ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে এই অভিযোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : জঙ্গি দমনে বিরাট সাফল্য, একযোগে খতম ২৯ নকশাল! ছত্তিশগড়ে রণংদেহী ভারতীয় সেনা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উদ্যোক্তা ছাত্রমহলের দাবি, কেবল রাম নবমীই নয়, গত বছর সরস্বতী পুজোতেও নাকি একইরকম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বাম সংগঠনগুলি। বিশেষ করে নাম উঠে আসছে DSF ও SFI এর। এরই সাথে গত বছর প্রথমবর্ষের পড়ুয়া হত্যার স্মৃতি উস্কে আদিত্য পালে বলেন, সেই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল অভিযুক্ত DSF-র সাথে যুক্ত ছিল। যদিও এই রাম নবমী বিতর্ক প্রসঙ্গে SFI নেতা শৌর্যদীপ্ত সাফাই দিয়ে বলেন, ‘রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ঘিরে ক্যাম্পাসে অরাজকতা তৈরি হয়েছিল। তেমন পরিস্থিতি যাতে আবার না হয়, তাই অনুমতি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম।’ যদিও তাতেও প্রশ্ন থেকে যায়, আয়োজক ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ পুজোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে অরাজকতা সৃষ্টি করছে কারা?