বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতে (India) বিচারব্যবস্থার গতি মন্থর। ফলে বিচার শুরু হলে তার নিষ্পত্তি হতেই সময় লাগে বছরের পর বছর। এতে কার্যত বিচারপ্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। ভারতের বিচারব্যবস্থার পরিকাঠামো সম্পর্কে দেশের শীর্ষ আদালতের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিং একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। ওই রিপোর্টে যে তথ্য পেশ করা হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শীর্ষ আদালতের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের পেশ করা ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ভারতের আদালতগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যক এজলাস নেই। যত সংখ্যক এজলাস কক্ষ থাকা উচিত তার চেয়ে ৪,২৫০ টিরও কম সংখ্যক এজলাস কক্ষ রয়েছে।
এছাড়া বিচারক বা বিচারপতিদের জন্যে সরকারি বাসস্থানেরও রয়েছে অভাব। সূত্রের খবর অনুসারে, সারা দেশের জেলাগুলির আদালতে বিচার করার জন্য অনুমোদিত বিচারকের সংখ্যা ২৫,০৮১জন। বিচারকদের বিচার করতে হলে এজলাসকক্ষ থাকা অত্যন্ত জরুরি একথা বলাবাহুল্য। এদিকে শীর্ষ আদালতের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিং যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এজলাস কক্ষই নেই। এছাড়া অন্তত ৬ হাজারের বেশি বিচারকের থাকার জন্য সরকারি আবাসনও নেই।
মূলত, দেশের কোন রাজ্যগুলোতে কত সংখ্যক এজলাস কক্ষের অভাব এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিং। সেই অনুযায়ী জম্মু কাশ্মীরে এবং লাদাখে ৪০.৭৮ শতাংশ কম এজলাস কক্ষ রয়েছে। এছাড়া জম্মু কাশ্মীর এবং দিল্লিতে বিচারকদের বসবাসের জন্যে সরকারি আবাসন ৬১ শতাংশ কম রয়েছে। সূত্রের খবর, সারা দেশের মধ্যে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় এজলাস কক্ষের সবচেয়ে সঙ্কটজনক অবস্থা। প্রয়োজনের থেকে ত্রিপুরায় ৩৫.৯৩ শতাংশ কম এজলাস কক্ষ কম হয়েছে।
এমতাবস্থায়, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন কবে হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শীর্ষ আদালতের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের তরফে এও বলা হয়েছে, বিচারব্যবস্থা পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে উদ্যোগ নিতে হবে। এজলাস কক্ষ এবং বিচারকদের সরকারি বাসস্থানের উপযুক্ত ব্যবস্থা করার জন্যে রাজ্য সরকারগুলিকে জমির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এদিকে, এখনও পর্যন্ত সেই ব্যবস্থা না হওয়ার ফলে আদতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: খুলে যাচ্ছে নতুন দিগন্ত! ভারতের মহাকাশ অর্থনীতি পৌঁছবে ৩৫,২০০ কোটিতে, হতে চলেছে বিপুল বিনিয়োগ
উদাহরণ হিসেবে শীর্ষ আদালতের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিং যে রিপোর্টটি পেশ করেছে, তাতে ভারতের বিচারব্যবস্থার পরিকাঠামোর করুণ হালের উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, বিহারের বিহারশরিফ জেলা আদালতে বিচার চলাকালীন এজলাস কক্ষের দেওয়াল ভেঙে পড়ে একজন মহিলার মৃত্যুর মতো দুভার্গ্যজনক ঘটনাও ঘটেছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে সবথেকে বেশি গৃহহীন মানুষ রয়েছেন এই দেশে! তালিকায় একাধিক পড়শি দেশ, ভারতের স্থান কত?
উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনের প্রচারে দেশের শাসক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নানা ইস্যুতে পরস্পরকে দোষারোপ করবে, এটাই নির্বাচনী ট্র্যাডিশন। যদিও বিচারব্যবস্থার পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতা নিয়ে এপর্যন্ত নীরব সমস্ত রাজনৈতিক দল। এদিকে, ১৯০ বছর ব্রিটিশ শাসকরা ভারতকে পদানত করে রাখার পর স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক অতিক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বিচারব্যবস্থার পরিকাঠামোর যে হাল সেটা ভারতবাসীর প্রকৃত স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।