ভালোবাসেন বিরিয়ানি, হলে গিয়েই সিনেমা দেখা পছন্দ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! রইল তার রোজনামচা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : দেখতে লাগে ভারী রাশভারী। প্রথম দর্শনে আশপাশের মানুষেরা অবশ্য গুরুগম্ভীর বলেই ভেবে থাকেন। এদিকে বয়স ৬০ ছুঁইছুঁই হলেও দৈনন্দিন জীবনের কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিজেকে রাখেন ‘ফিট অ্যান্ড ফাইন’। কোর্টচত্বরে তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বদের কালঘাম ছোটালেও ব্যক্তিগত জীবনে ভীষণই সাদামাটা মানুষটি। তিনি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কলকাতা হাইকোর্ট তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম আলোচিত নাম। এসএসসি মামলায় মন্ত্রী-কন্যার চাকরি খোয়ানো থেকে শুরু করে ৭৬ বছরের প্রৌঢ়ার সিকি শতকের বকেয়া বেতন দেওয়ার নির্দেশ এসেছে তারই হাত ধরে। জনগণের পাশে প্রত্যেকটি মুহূর্ত থাকার অঙ্গীকার নিয়ে চলার কারণেই আমজনতার একাংশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম দিয়েছেন ‘জনগণের বিচারপতি’।

এই ‘জনগণের বিচারপতি’ মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে ঠিক কেমন এবার সেই দিকেই একটু নজর রাখা যাক। অভিজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, গম্ভীর মুখের আড়ালে লুকিয়ে আছেন এক আদ্যোপান্ত রসিক মানুষ। দিনভর কাজের চাপে থাকলেও দৈনন্দিন জীবনে নিয়মানুবর্তিতাকে সবার উপরে ঠাঁই দিয়েছেন। তার প্রাত্যাহিক রোজনামচা অবশ্য আর পাঁচজনের মতোই।

রোজ সকালে ৯টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয়ে যায় তার আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি। আদালতে বেরোনোর আগে রুটি আর সেই সঙ্গে অল্প তেলে রান্না করা বিভিন্ন মরসুমি সব্জি দিয়ে তৈরি তরকারি খেয়ে নেন। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকার জন্য নিয়ম করে ইনসুলিনও নেন। অভিজিৎবাবুর সঙ্গে কর্মরত মানুষদের দাবি, চা ছাড়া থাকতে পারেন না। দিনে অন্তত ৩০ কাপ চা একেবারে কম্পালসারি। ১৯৯৫ সাল থেকে খাদ্য তালিকায় ভাতের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও পরিবারের সদস্যদের কথায়, রবিবাসরীয় দুপুরে অবশ্য সামান্য একটু হলেও ভাত খান। রাতে খাওয়ার পাতে বিভিন্ন সময় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে থাকে লুচি, পরোটা বা রুটি। পারিবারিক সূত্রে খবর, বিরিয়ানিই নাকি বিচারপতির প্রিয় খাবার। মাঝে মাঝে কচুরি-আলুর দম পেলে তো কোন কথাই নেই।

বন্ধুমহলে অবশ্য ঠাট্টা করে বিচারপতি প্রায়ই বলেন, দায়িত্ব সামলানোর জন্য আলাদা করে সুস্থ থাকার কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন না। তার কথায়, শরীর থাকলে মাঝেমধ্যে একটু খারাপ হবে। নিয়মিত শরিরচর্চা না করলেও খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে তার।

হাইকোর্টে এত গুরুত্বপূর্ণ মামলা সামলানোর পর রাতে বাড়ি ফিরে তিন চারটে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে পড়েন। তবে তখন আর আইনের বই নয়। ওই সময়টায় ইংরেজি এবং বাংলা সাহিত্যের রসাস্বাদন করেন। পছন্দের কবির তালিকায় আছেন জীবনানন্দ আর জয় গোস্বামী। সময় পেলেই তাঁদের কবিতার বইয়ের পাতা ওল্টান। বই পড়ার পাশাপাশি সিনেমা দেখার প্রতি একটা বিশেষ টান রয়েছে বিচারপতির। ওটিটি নয়, বড় পর্দাতে সিনেমা দেখাই বেশি পছন্দ তার। এক সময় থিয়েটারের মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করলেও পেশাগত কারণে আর নিয়মিত থিয়েটার করা হয়নি। এর পাশাপাশি, রবীন্দ্রনাথের গান তার সব সময়ের সঙ্গী।

Abhijit Gangopadhyay

ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, মানসিক চাপ দূর করতেই সুর আর ছন্দকে আঁকড়ে ধরেন। আর ব্যক্তিজীবনের বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেই নাকি বিচারপতি মুচকি হেসে সুকুমার রায়ের দুটি পংক্তি বলেন—‘খেলার ছলে ষষ্ঠীচরণ/ হাতি লোফেন যখন তখন’।


Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর