বাংলা হান্ট ডেস্ক : গতকালই এসেছে সেই রায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলা (Recruitment Scam) থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার ‘শাস্তি’ পেলেন এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব কলকাতা উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। সৌজন্যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল গভীর রাতে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজের চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
শেষ হয়েও হইল না শেষ : এরপরই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সব শেষ? নিজের চাকরি জীবনে কি একটা লাল দাগ হয়ে রয়ে গেল এই ঘটনা? বিরাট কলঙ্কের বোঝা কি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে? আপাতদৃষ্টিতে এগুলি মনে হলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। নির্বাসনের নির্দেশ ‘শাপে বর’ হয়ে দেখা দিতে পারে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে। এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
খেলা এখনও অনেক বাকি : গোপন সূত্রে খবর, সবার অলক্ষ্যেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হওয়ার দৌড়ে উঠে এসেছে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এটা পড়ে চোখ কপালে উঠলেও এটাই বাস্তব। এবার দেখে নেওয়া যাক হঠাৎই কিভাবে রাজ্যপাল হওয়ার দাবিদার হয়ে উঠলেন তিনি।
১) বিজেপির লক্ষ্য : জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের বিরোধের কথা অজানা নয় কারোর। মাঝেমধ্যেই তাঁদের মধ্যে লেগে যেত তীব্র সংঘাত। যার ফল স্বরূপ একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। রাজ্যপাল বদলের দাবিতে দরবার করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছেও। অবশেষে জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হলে সাময়িক ভাবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন লা গনেশন।
এরপর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে বসেন সিভি আনন্দ বোস। এখানেই বাঁধে গণ্ডগোল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রীতিমতো সুসম্পর্ক তৈরি হয় রাজ্যপালের। রাজ্যপালের অতিরিক্ত মমতা-প্রীতিতে মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয় রাজ্য বিজেপি। বিশেষত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তো প্রকাশ্যেই রাজ্যপালের সমালোচনা করে বসেন। অবস্থা খারাপ বুঝে আনন্দ বোসকে দিল্লি ঢেকে পাঠিয়ে ‘তালিম’ও দেওয়া হয়। তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই অবস্থায় আনন্দ বোসের জায়গায় নতুন রাজ্যপাল নিয়ে আসার কথা ভাবতে পারে কেন্দ্র সরকার। আর সেই ক্ষেত্রে প্রথম নামটিই উঠে আসবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এমনই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের
২) যোগ্য ব্যক্তি : অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যোগ্য ব্যক্তি। তিনি প্রাক্তন রাজ্য সরকারি আমলা। সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়। তারপর আবার তিনি আইনের ছাত্র। সফল হন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষাতেও। তার উপর তিনি বাঙালি, তাই পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তাঁর সার্বিক অভিজ্ঞতা আগে থেকেই রয়েছে। এমন এক ব্যক্তিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের পদে দেখতে চাইতেই পারে কেন্দ্র সরকার।
৩) মমতার সঙ্গে সম্পর্ক : রাজ্যপাল হিসাবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিজেপির প্রথম পছন্দের সবচেয়ে বড় কারণ হল বর্তমান রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একাধিক রায়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করেছেন মমতা সরকারকে। নিজের এজলাস থেকেই তোপ দেগেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তার উপর নিয়োগ দুর্নীতি মামলা খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পনে। তৃণমূল সরকারের একাধিক দুর্বলতাকে তিনি হাতের তালুর মত চেনেন। তাই এমন এক ব্যক্তিত্বকে পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী রাজ্যপাল হিসাবে চাইতেই পারে পদ্ম শিবির।