বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত বছর ধরে বঙ্গ জুড়ে নিয়োগ দুর্নীতির রমরমা। রাজ্যের আনাচে কানাচে থেকে উঠে আসছে ভুরিভুরি অভিযোগ। এইরকমই এক নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে মামলা উঠেছিল কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court)। নথি জাল করে চাকরি দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর (Justice Biswajit Basu) এজলাসে। আর আজ ফের একবার সেই মামলায় সিআইডি তদন্তে জোর অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি।
বারংবার এই মামলা নিয়ে আদালতের মুখে পড়েছে তদন্তকারী সংস্থা। এমনকী আদালতে ডিআইজি-সিআইডিকে তলবও করেছিলেন বিচারপতি। এদিন আদালতের নির্দেশ মতো ডিআইজি-সিআইডি বিচারপতি বসুর এজলাসে উপস্থিত হয়ে ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট পেশ করেন। যদিও সেই রিপোর্ট নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলেছে আদালত।
ঘটনাটি কি? মুর্শিদাবাদের গোথা এয়ার স্কুলে ভুগোলের শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন অনিমেষ তিওয়ারি। তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন এক জনৈক চাকরিপ্রার্থী। অভিযোগ ছিল, সুপারিশপত্র মেমো নকল করে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। অনিমেষের বাবা ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার সাহায্যেই ‘ভুয়ো’ নথি করিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন: গভীর নিম্নচাপে উত্তাল আবহাওয়া! কিছুক্ষনেই তোলপাড় করা বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গের এই ৬ জেলায়
এই মামলায় তদন্তকারী আদালতে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান। এরপরই সেই মামলায় ডিআইজি-সিআইডির নেতৃত্বে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তবে এদিন তারা রিপোর্ট পেশ করলে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বেজায় অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত।
কি বললেন বিচারপতি? বিচারপতি বসু বলেন, ‘৬টি রিপোর্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে না এই দুর্নীতি কীভাবে হয়েছিল। কীভাবে পরিকল্পনা করে দুর্নীতি সংগঠিত করা হয়েছিল, তার কোনও উল্লেখ নেই রিপোর্টে।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এদিনের রিপোর্ট ধরে এই মামলায় এখনও পর্যন্ত সিআইডি মোট ৬টি রিপোর্ট পেশ করেছে।
আরও পড়ুন: ‘অগাধ আস্থা ছিল, কিন্তু..’, CID-র রিপোর্টে হতাশ! এজলাসে বসেই ‘বিরাট’ পদক্ষেপ বিচারপতির
বিচারপতির কথায়, ‘ভবিষ্যতে কীভাবে দুর্নীতি আটকানো যায়, তার কোনও উল্লেখ নেই রিপোর্টে।’ সিআইডিকে বিচারপতি বসুর প্রশ্ন, ‘আদালত সি আইডির ওপর অগাধ আস্থা রেখেছিল, কিন্তু তারপর এই রিপোর্ট? আর কোনও অনিমেষ তিওয়ারি রয়েছে কিনা আমি সেটা দেখতে চাই। অনিমেষ যে কলেজের বিএড সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন, আদৌ সেই কলেজে বিএড করেছিলেন কিনা, সেই বিষয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
তারপর? চাপে পড়ে এদিন সিআইডি ফের নতুন করে এফআইআর দায়ের করতে চেয়ে বিচারতির কাছে আবেদন জানায়। এরপরই বিচারপতি এই মামলায় এদিন একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করার নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশ স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব , মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিব এবং শিক্ষা দফতরের নিয়ে এই বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘এই কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে অনিয়ম, বেআইনি কাজ এবং দুর্নীতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।’ আগামী ১ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন সিআইডিকে নতুন করে রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বসু।