সৌতিক চক্রবর্তী,বোলপুর,বীরভূমঃ প্রায় পাঁচশো বছরের সাবেক রীতি মেনে বলভদ্র কালীর পুজোতে এখনও মেতে ওঠেন বোলপুরের গোয়ালপাড়ার ভট্টাচার্য পরিবার। ভট্টাচার্যদের পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে এই পুজো হয়ে আসছে। যদিও এখন বর্তমানে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় পালা করে এই কালীপূজো হয়। জানা গেছে,ষোলো বছর অন্তর অন্তর এক এক জনের কাছে এই পুজোর দায়িত্ব এলেও,আনন্দে মাতে গোটা গ্রাম থেকে বোলপুর শহর।
এই পূজোর ইতিহাস নিয়ে গোয়ালপাড়ার ভট্টাচার্য পরিবারের কিছু প্রবীণ সদস্যরা জানান,“বাবাদের মুখে শুনেছি, প্রায় পাঁচশো বছর আগে কোপাই নদীর তীরে একটি শেওড়া গাছ ছিল। সেই গাছের তলায় বিশিষ্ট তান্ত্রিক বলভদ্র গোস্বামী এই পুজো শুভারম্ভ করেছিলেন। পরে তাঁর বার্ধক্যে এসে গেলে এই পুজোর দায়িত্ব তিনি আমাদের পরিবারের অন্যতম সদস্য কাশীনাথ ভট্টাচার্যের’কে দায়িত্ব দেন। কিন্তু কাশীনাথবাবু বলভদ্র গোস্বামীকে প্রশ্ন করেন পুজো করবো কীভাবে? সেই প্রশ্নের উত্তরে ওই তান্ত্রিক তাঁকে অভয় দেন। পরে কালীপূজোর জন্য আমাদের গ্রামের বাসিন্দা থাকুমণি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের নয় বিঘে আমাদের পরিবারের হাতে তুলে দেন। কোপাই নদীর পাড় থেকে এই কালী পুজো উঠে আসে গোয়ালপাড়া গ্রামের মাঝে বটতলার কাছে। বর্তমানে গ্রামের কালিদাস সরকারের দেওয়া জমিতে এই পুজো হয়।”
ভট্টাচার্য পরিবারের আরোও কিছু সদস্য জানান,“তান্ত্রিক বলভদ্র গোস্বামীর শেষ ইচ্ছে মতো মা কালীর পূজোর জায়গায় সমাধিস্থ করা হয় তাঁর দেহ। এই বটতলার নীচেই ১০৮ টি মড়ার খুলির কাছেই তান্ত্রিকের দেহ সমাধি দেওয়া হয়েছে। ওনার নির্দেশ অনুযায়ী,কার্ত্তিক অমাবাস্যা তিথিতেই সন্ধ্যা নিশির পুজো হয়। প্রাচীনপ্রথা মেনে এখনও হয় বলিদান।”
কিন্তু এই কালীপূজোর নাম বলভদ্র কালী কেন রাখো হলো? এই নিয়ে ভট্টাচার্য পরিবারের এক সদস্য জানান,“বলভদ্র গোস্বামীর মৃত্যুর পর এই পুজো বলভদ্র কালী পুজো নামেই খ্যাত হয়েছে।”
এই পূজোয় ভট্টাচার্য পরিবার,গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সহ ওই এলাকার সমস্ত বাসিন্দারা এই পূজোয় এসে যোগদান করে। যদিও এই পূজো বর্তমান যুব সমাজও হাত লাগিয়েছে।