৩০ হাজার কোটির জালিয়াতি! ‘’স্ক্যাম ২০০৩’-এর তেলগির বাস্তব গল্প শুনলে চোখ কপালে উঠবে

বাংলা হান্ট ডেস্ক : ১০ বছরে ১৮ টি রাজ্য এবং ৭২ টি শহর…আবদুল করিম তেলগি (Abdul Karim Telgi) অপরাধের সাক্ষী ছিল। এই অপরাধটি ছিল জাল স্ট্যাম্প (Stamp Paper Scam) পেপার কেলেঙ্কারি, যা ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা দিয়েছিল। একজন মামুলি ফল বিক্রেতা থেকে মাফিয়া হয়ে ওঠার এই গল্প এবার জায়গা করে নিয়েছে ওটিটি-র দুনিয়ায়। সদ্যই রিলিজ হয়েছে ২০০৩ সালে ফাঁস হওয়া এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি ‘স্ক্যাম 2003: দ্য তেলগি স্টোরি’ (Scam 2003: The Telgi Story)। কে ছিল এই তেলগি? কী ছিল তার গল্প? আজকের প্রতিবেদনে সেটাই তুলে ধরা হল পাঠকদের জন্য।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে আপনারা দেখেছেন ‘Scam 1992: The Harshad Mehta Story’। ১৯৯২ সালে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা ছিল ভারতের ইতিহাসে হওয়া সবচেয়ে বড় মানি মার্কেট কেলেঙ্কারির মধ্যে একটি। যার পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। যখন এই স্ক্যাম শুরু হয় সেই সময় দেশে স্ট্যাম্প পেপারের অভাব দেখা যায়। আর সেটারই সুযোগ নেন আবদুল করিম তেলগি। কর্ণাটকের একটি ছোট গ্রাম খানপুর থেকে মুম্বাই শহরের মাফিয়ারাজা হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

   

শৈশবেই তেলগির বাবা মারা যায়। এরপর সংসারের যাবতীয় চাপ এসে পড়ে তেলগির কাঁধে। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন হকারি। ট্রেনে উঠে ফল বিক্রি করতেন তিনি। এখান থেকেই স্কুল ও কলেজের খরচ জোগাতেন তিনি। এরপর বেলগাঁওয়ের গোগেট কলেজ অফ কমার্স থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। দেশের মধ্যে ভালো কিছু হওয়ার আশা ছেড়ে তিনি পাড়ি জমান দুবাইতে। সাত বছর পর মুম্বাইতে ফেরেন ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে। প্রথম প্রথম সৌদিতে লোক পাঠানোর জন্য আইনসম্মত উপায়েই স্ট্যাম্প বিক্রি করতে শুরু করেন। কিন্তু, তারপর দ্রুত পয়সা রোজগারের উচ্ছাঙ্খার জন্যই বেআইনি পথে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। ভুয়ো স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করেন তেলগি।

আরও পড়ুন : চুপিসারে বিয়েটা সেরেই ফেললেন! মাথাভর্তি সিঁদুর নিয়েই মুম্বাই পাড়ি দিলেন শ্রীলেখা

abdul karim telgi social

সাল ১৯৯৩ তে ধরাও পড়ে যান। বিচারে জেল হয় তার। তবে এই কারাবাস তার জন্য সাজা কম উল্টে ব্যবসার সুবিধা করে দেয়। জেলে তার পরিচয় হয় একজন সরকারি স্ট্যাম্প ভেন্ডারের সাথে। জেলের ভেতর থেকেই দুজন মিলে শুরু করে অবৈধ কাজকারবার। ক্রমেই জেল থেকেও ছাড়া পেয়ে যায় তেলগি। ১৯৯৬ সালে মিন্ট রোডে জাল স্ট্যাম্প পেপার বানানোর প্রেস অবধি খুলে ফেলে তেলগি। নব্বইয়ের দশকে একজন ফল বিক্রেতা হয়ে ওঠে কোটি কোটি টাকার মালিক। এসব জাল স্ট্যাম্প পেপার বীমা কোম্পানি থেকে শুরু করে ব্যাংক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সবার কাছে বিক্রি হতো। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, এই কেলেঙ্কারিতে বহু হেভি ওয়েট নেতা থেকে শুরু করে বহু পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মচারী ছিল।

আরও পড়ুন : ডোনা মিষ্টি নাকি তেঁতো? ‘দাদাগিরি’র মঞ্চে স্ত্রীকে নিয়ে বড় খোলাসা করলেন সৌরভ

telgi03 1546247940

এরপর ২০০১ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তেলগি। শুরু হয় তেলগি সাম্রাজ্যের পতন। বিচারে ৩০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০৩ কোটি টাকার জরিমানা হয় তার। এরপর ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর ৫৬ বছর বয়সে জেলের সাজা কাটানোর সময়ই মৃত্যু হয় তার। জানিয়ে রাখি, আবদুল করিম তেলগির ব্যক্তিগত জীবনও কম রঙিন ছিল না। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মুম্বইয়ের টোপাজ বারের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন তেলগি। এই বারের নর্তকীদের কাছে হার মেনে যেত বলিউড অভিনেত্রীদের সৌন্দর্য। সেখানকারই এক নর্তকীর প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। তেলগির প্রভাবে সেই সুন্দরী হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং ধনী বার ডান্সার হয়ে ওঠেন। তার নাম ছিল তরান্মুম খান। মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, একরাতে মাত্র এক ঘন্টায় তরান্মুমের উপর ৯৩ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন তেলগি। বার ডান্সারের সঙ্গে তেলগির মাখো মাখো প্রেমের এই গল্প ঠাঁই পেয়েছে সোনি লিভের সিরিজে।

Moumita Mondal
Moumita Mondal

মৌমিতা মণ্ডল, গ্র্যাজুয়েশনের পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত। প্রায় ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর