অভাবের সংসারে ছিল না কোনো গৃহশিক্ষক! হাঁটুতে ভর দিয়েই মাধ্যমিক দিচ্ছে মহসিনা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik Pariksha)। চলতি বছরে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাটি দিচ্ছে ৬.৯৮ লক্ষ পরীক্ষার্থী। সেই তালিকায় নাম রয়েছে ১৬ বছরের ছাত্রী মহসিনারও। যদিও, মহসিনার লড়াইটা আর পাঁচজনের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। ছোটবেলায় শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ায় অকেজো হয়ে যায় তার পা। যার ফলে হাঁটুর উপর ভর করেই চলাচল করতে হয় তাকে ।

এদিকে, পরিবারেও নেই আর্থিক স্বচ্ছলতা। যদিও, সমস্ত প্ৰতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখেই নিজের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে পোলবার কাশ্বারার এলাকার বাসিন্দা মহসিনা খাতুন। পড়াশোনা করে মা-বাবার কষ্ট দূর করতে চায় মহসিনা। আর সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই হাঁটুতে ভর দিয়ে মায়ের সঙ্গে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসল সে। মঙ্গলবার পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা পরীক্ষা দিতে মহসিনা পৌঁছে যায় হুগলির সুগন্ধা হাইস্কুলে। সেখানেই সিট পড়েছে তার।

উল্লেখ্য যে, আলিনগর ইয়াসিন মন্ডল শিক্ষানিকেতন স্কুলের ছাত্রী মহসিনা এদিন মায়ের সঙ্গে বাসে করেই সুগন্ধা হাইস্কুলে পরীক্ষা দিতে আসে। আর সেখানেই দৃপ্তকণ্ঠে সে জানায় ভালোভাবে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় ওই ছাত্রী। আর সেই কারণেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার মনোবল ভেঙে দিতে পারে নি।

এই প্রসঙ্গে মহসিনার মা ইসমাতারা বিবি জানিয়েছেন, “২০১০ সালে হঠাৎই একদিন প্রচন্ড জ্বর-সর্দি হয় মহসিনার। সেই অবস্থায় দ্রুত তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও ক্রমশ মেয়ের পা দু’টো বেঁকে যেতে থাকে। তখন থেকেই আর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ঠিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না মহসিনা। পাশাপাশি হাঁটুতে ভর করেই স্কুলে যাতায়াত করে সে। কখনও ওর বাবা আবার কখনও আমি মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসি। মেয়েকে দেখে আমাদের কষ্ট লাগলেও আমি চাই ও নিজের পায়ে দাঁড়াক।”

whatsapp image 2023 02 23 at 8.13.52 pm

এদিকে, অভাবের সংসারে এই স্বপ্নপূরণের লড়াই হয়েছে আরও কঠিন। মহসিনার বাবা কারখানার শ্রমিক। পাশাপাশি, মা বাড়িতে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। আর্থিক অনটন এতটাই তীব্র যে মহসিনার চিকিৎসাও করানো সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও কোনো গৃহশিক্ষক ছিল না তার। তবে, নিজের উদ্যোগে পড়াশোনা চালাতে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছে মহসিনা। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক এবং শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে। আর এভাবেই সে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এমতাবস্থায়, মহসিনার এই লড়াই অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে এলাকাবাসীকে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর