বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশে (Bangladesh) ক্রমবর্ধমান ‘মব সন্ত্রাস’ নতুন করে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহে প্রকাশ্য রাস্তায় জনতার হাতে দীপু দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা এবং তার পরবর্তী নৃশংস দৃশ্য দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। এর আগেও গত ৯ অগস্ট ভ্যান চোর সন্দেহে রুপালাল দাস ও প্রদীপ দাসকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটে। দীপু দাসের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই গণপিটুনির শিকার হন অমৃত মণ্ডল। একের পর এক এই ঘটনাগুলি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে বাংলাদেশে মব সন্ত্রাস কতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে, তা নতুন করে সামনে এনেছে।
বাংলাদেশে (Bangladesh) মাথাচাড়া দিচ্ছে মব সন্ত্রাস!
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর একটি বিস্তৃত রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। আসকের রিপোর্টের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে দেশে কমপক্ষে ২৯৩ জন মানুষ মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মব সন্ত্রাসে নিহতের সংখ্যা ছিল ১২৮ জন, আর ২০২৫ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৭ জনে। আসকের দাবি, চলতি বছরে এই ধরনের সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
আরও পড়ুন:আজকের রাশিফল ১ জানুয়ারি, বছরের প্রথম দিনেই ভাগ্য প্রসন্ন হবে এই চার রাশির
রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনও ধরনের প্রমাণ, তদন্ত বা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই সন্দেহ ও গুজবের ভিত্তিতে মানুষকে মারধর ও হত্যা করা হচ্ছে। শুধু ব্যক্তি হত্যাই নয়, বেআইনিভাবে মব তৈরি করে শিল্প-সংস্কৃতি কেন্দ্র ভাঙচুর, বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং এমনকি কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা ও বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের হেনস্থার ঘটনাও বেড়েছে এবং বহু ক্ষেত্রে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে।
২০২৫ সালে মব সন্ত্রাসে মৃত্যুর ভৌগোলিক পরিসংখ্যানও প্রকাশ করেছে আসক। রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকাতেই এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—২৭ জন। এরপর গাজিপুরে ১৭, নারায়ণগঞ্জে ১১, চট্টগ্রামে ৯, কুমিল্লায় ৮ এবং ময়মনসিংহে ৬ জন মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মারা গিয়েছেন। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করছে যে, শহরাঞ্চলও এই সহিংসতার বাইরে নয়।

আরও পড়ুন:পিনাকের পর প্রলয়ের গর্জন! বঙ্গোপসাগরে সম্পন্ন হল নয়া ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা
রিপোর্টে আরও এক বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে। চলতি বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অন্তত ৪২টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মন্দিরে হামলা, বসতবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং জমি দখলের মতো ঘটনা। পাশাপাশি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরেও হামলার কথা উঠে এসেছে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে একাধিকবার ভাঙচুরের ঘটনাকে উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড বাঙালি জাতিসত্তা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত জাতীয় স্মৃতিচিহ্নগুলির প্রতি গুরুতর অবমাননার শামিল।












