বাংলা হান্ট ডেস্ক: চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik Pariksha) ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। রাজ্যজুড়ে পরীক্ষার্থীরা জীবনের প্রথম বড় এই পরীক্ষাটি দিচ্ছে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন দুই পরীক্ষার্থীর প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যাঁদের সম্পর্কে জেনে রীতিমতো অবাক হবেন সকলেই। মূলত, MA পাশ করা মেয়ের ইচ্ছেতেই আবারও পড়াশোনার মধ্যে ফিরেছেন বহুকাল আগে স্কুলছুট হওয়া মা আয়েশা বেগম ও দাদা শেখ পারভেজ আলম।
শুধু তাই নয়, চলতি বছরের মাধ্যমিকে একই সাথে পরীক্ষাও দিচ্ছেন ওই মা-ছেলে। মেয়ে ফিরদৌসির অনুপ্রেরণাতেই তাঁরা ফের পড়াশোনার মধ্যে যুক্ত হয়েছেন। উল্লেখ্য যে, ফিরদৌসী MA পাশ করলেও স্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেননি তাঁর মা ও দাদা। আর এই বিষয়টা নিয়েই আক্ষেপ ছিল তাঁর। এমতাবস্থায়, পড়াশোনার ব্যাপারে ক্রমাগত মা ও দাদাকে অনুপ্রাণিত করেন তিনি। আর সেখান থেকেই সাহস পেয়ে নতুন করে পড়াশোনার মঞ্চে লড়াই শুরু করেছেন তাঁরা।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, তাঁরা হলেন শক্তিগড়ের (Saktigarh) ঘাটশিলা গ্রামের বাসিন্দা। আয়েশার স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় একজন কৃষিজীবী। এদিকে, খুব ছোটবেলায় আয়েশার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। এমনকি, পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই কঠিন ছিল যে, নিম্নবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান পারভেজ আলম বেশ কয়েকবছর আগেই লেখাপড়ায় ইতি টেনেছিলেন।
তবে, হাজারও প্রতিবন্ধকতা সত্বেও কোনোমতে পড়াশোনা চালিয়ে যান ফিরদৌসি। ইতিমধ্যেই তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে MA পাশ করে চাকরির খোঁজে রয়েছেন। তবে, নিজে পড়াশোনা করার পাশাপাশি ফিরদৌসি চাইতেন তাঁর মা এবং দাদাও ফের পড়াশোনার সাথে যুক্ত হন। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি ক্রমাগত উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন তাঁদের। তারপরেই ঘাটশিলা সিদ্দিকীয়া সিনিয়ার হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যান তাঁরা। শুরু হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিও। এমন পরিস্থিতিতে, মেমারি হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন তাঁরা।
এদিকে, এই প্রসঙ্গে আয়েশা জানিয়েছেন, প্রায় ২৫ বছর আগে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় তাঁকে। এমনকি, সংসারের কথা ভেবে ২০১০ সাল বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজেও যোগ দেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি আরও জানান, “সংসার ও আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ সামলে লেখাপড়ার মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার অনুপ্রেরণা মেয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। মেয়ের ইচ্ছেতেই সবকিছু সামলে রাতে পড়াশোনা করেছি। এইভাবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ারও ইচ্ছে রয়েছে আমাদের।’’
এছাড়াও, আয়েশার ছেলে পারভেজ আলমও জানিয়েছেন যে, বোনের অনুপ্রেরণাতেই আবার লেখাপড়া শুরু করার সাহস পেয়েছেন তাঁরা। সংসারের হাল ধরতে ক্লাস এইটে পড়া ছেড়ে মুম্বাইতে গিয়ে অলংকার তৈরির কাজ করতেন তিনি। তবে, এবার ফের মায়ের সাথে পড়াশোনা শুরু করেন পারভেজ। এদিকে, স্ত্রী ও ছেলে একই সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনায় খুশি হয়েছেন আয়েশার স্বামী সাইফুল আলম। এছাড়াও, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে সকলেই ফিরদৌসির এহেন ভাবনার প্রশংসা করার পাশাপাশি আয়েশা ও পারভেজকে কুর্ণিশও জানাচ্ছেন।