বাংলাহান্ট ডেস্ক: মুম্বইয়ে (Mumbai) ১৭ জন শিশুকে পণবন্দি করে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেন স্কুল শিক্ষক এবং ইউটিউবার রোহিত আর্য। দীর্ঘ নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু মৃত্যুর পরও থামেনি তাঁকে ঘিরে বিতর্ক ও কৌতূহল। কারণ, অপহরণের পর প্রকাশিত এক ভিডিওতে নিজের ‘উদ্দেশ্য’ স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন রোহিত। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি জঙ্গি নই। আমার কোনও অর্থের চাহিদাও নেই। আমি কোনও অনৈতিক কিছু চাইছি না।” তাঁর দাবি প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠছে— কে ছিলেন রোহিত আর্য এবং কেন তিনি এমন ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিলেন?
মুম্বাইয়ে (Mumbai) পণবন্দি অভিযুক্তের এনকাউন্টার:
তদন্তে জানা গিয়েছে, পেশায় শিক্ষক রোহিত পাশাপাশি ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করতেন। সূত্রের দাবি, স্বচ্ছতা অভিযানের অংশ হিসেবে মুম্বাইয়ের (Mumbai) একটি সরকারি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই কোটি টাকা। সেই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন রোহিত, কিন্তু নাকি পারিশ্রমিক পাননি। শিক্ষা দফতরের তরফে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় দুইবার অনশনও করেছিলেন তিনি। তবুও সুরাহা হয়নি। এরপরই চরমপন্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত— এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগের তির তাঁর লক্ষ্য ছিল মহারাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রী দীপক কেসারকারের দিকে।
আরও পড়ুন: “বিনিয়োগের জন্য ভারত একেবার যথার্থ বন্দর”, মেরিটাইম উইক থেকে বার্তা মোদীর
ঘটনার দিন রোহিত ওয়েব সিরিজের অডিশনের নাম করে প্রায় ১০০ জন ছাত্রকে ডেকে পাঠান মুম্বইয়ের (Mumbai) পোয়াইয়ের একটি অভিনয় শেখার প্রতিষ্ঠানে। পরে ৮৩ জনকে ছেড়ে দেন, কিন্তু বাকি ১৭ জন শিশুকে বন্দি করে রাখেন। আরও দু’জনকেও আটক করেছিলেন বলে জানা যায়। পোয়াইয়ের আরএ স্টুডিওর নিচতলায় তিনি ওই সমস্ত পড়ুয়াকে আটকে রেখে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে রোহিত দাবি করেন, তিনি কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান। প্রশাসন যদি একটুও ভুল পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে— এমন হুমকিও শোনা গেছে তাঁর মুখে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পোয়াই এলাকায়। চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়, স্টুডিও ঘিরে ফেলে বিশেষ বাহিনী। রোহিত দাবি করেন, সামান্যতম ভুল হলেই শিশুদের পুড়িয়ে মারবেন তিনি। আতঙ্কে কাঁপছিল সমগ্র এলাকা, পরিবারের সদস্যরা অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছিলেন বাইরে। পুলিশ প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমাগত জটিল হতে থাকলে এবং শিশুদের জীবন সুরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে অভিযানে নামে বাহিনী।

আরও পড়ুন: দামে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি! এই কোম্পানির স্টকে রকেটের গতি, শেয়ার বাজারে তুলছে ঝড়
তীব্র উত্তেজনার শেষে গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রোহিত আর্য। তাঁর মৃত্যুতে যদিও বাঁচানো সম্ভব হয়েছে ১৭ জন শিশুকে, তবু এক অদ্ভুত প্রশ্ন ঘুরছে— কেন এমন ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিলেন একজন শিক্ষক? প্রশাসনিক অবিচারের অভিযোগ থেকে ক্ষোভ, না অন্য কোনও ব্যক্তিগত প্রতিশোধ— সেসব এখন তদন্তের বিষয়। এখন রোহিতের অতীত, তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি, মানসিক অবস্থা এবং প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব— সব খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর সমস্ত ডিজিটাল কার্যকলাপ, ইন্টারনেট ইতিহাস ও ভিডিও বার্তাগুলি পরীক্ষা করা হবে। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপক কেসারকার এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন (Mumbai)।
ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, কোনও নাগরিকের দাবি-দাওয়ার বিচার না হলে, অবহেলা বা প্রশাসনিক নীরবতা কখনও কখনও কত ভয়ঙ্কর পথে নিয়ে যেতে পারে। মুম্বইয়ের পোয়াইয়ে এই কাহিনি আপাতত সবার সামনে রেখে দিয়েছে এক ভয়ঙ্কর বাস্তব— ক্ষোভ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, তখন এক শিক্ষকও হয়ে উঠতে পারেন মৃত্যুর দূত (Mumbai)।













