বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রতিভা থাকলে সাফল্য আসবেই! তাই শত দারিদ্রতাও কখনও বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না সাফল্য কিংবা শিক্ষা লাভের পথে। একথা যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন বাংলার তরুণী। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে অভাব তাঁর নিত্য সঙ্গী। বাবা পেশায় টোটো চালক, মা বিড়ি শ্রমিক।
এমন অভাব অনটনের সংসারেও সমস্ত প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে আদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মেধার জোরেই মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষা (All India Medical Entrance) বা নিটে (Neet) দারুন ফলাফল করেছেন মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) সুমাইয়া সিদ্দিকা (Sumaiya Siddika)। সর্বভারতীয় স্তরের এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৬৭০ নম্বর পেয়ে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই তরুণী।
সর্বভারতীয় স্তরে সুমাইয়ার র্যাঙ্ক হয়েছে ১৪০৩২ র্যাঙ্ক করেছেন। ওবিসি ক্যাটাগরিতে তাঁর র্যাঙ্ক ৫৯৮১।মেয়ের এই সাফল্যে বেজায় খুশি গোটা পরিবার। শুভেচ্ছা জানাতে ভিড় জমাচ্ছেন আশপাশের প্রতিবেশীরাও। মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা ব্লকের অর্জুনপুর পঞ্চায়েতের খোদাবন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমাইয়া সিদ্দিকার বাবা মোবারক হোসেন পেশায় টোটো চালক আর মা সাজেদা বিবি পেশায় বিড়ি শ্রমিক।
তাই ছোট থেকেই অভাবের সংসারে ভীষণ কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন সুমাইয়া । তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বড় সুমাইয়া ছোট থেকেই পড়াশোনায় দারুন মেধাবী ছিলেন। ক্লাসে বরাবরই প্রথম হয়ে এসেছেন তিনি। ছোট থেকেই চিকিৎসক খাওয়ার স্বপ্ন ছিল সুরাইয়ার। তাই দাঁতে দাঁত চেপে সমস্ত কষ্ট সহ্য করে প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আর সত্যিই পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন সুমাইয়া।
আর এদিন সাফল্যের স্বাদ মিলতেই সুমাইয়া সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘ছোট থেকে দেখেছি বিড়ি মহল্লায় শ্রমিকদের নানান অসুখে ভুগতে। নিজের মা অসুখে ভুগত। এই শ্রমিক বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা করাতে পারতেন না। আমি চিকিৎসক হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
আরও পড়ুন: বৃক্ষরোপণই নেশা! একা হাতে গড়েছেন ১৩৬০ একর জমির বন, চিনে নিন ভারতের অরণ্য মানবকে
মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছাসিত সুমাইয়া সিদ্দিকার বাবা মোবারাক হোসেন বলেছেন, ‘আমি লেখাপড়া শিখিনি। সবাই বলত মেয়ে অনেক বড় হবে। নজর দিও। আমি টোটো চালিয়ে ওদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। কোনওদিন অভাব বুঝতে দিইনি। আজ ওর সাফল্যে অত্যন্ত খুশি। আমি চাই ও মানুষের মতো মানুষ হয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াক। তাঁদের সেবা করুক।’