বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানে (Pakistan) তালিবান হামলার জন্য ভারতকেই দায়ী করল পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। এতদিন নয়াদিল্লি অভিযোগ করত, পাকিস্তান তার মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনদের দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ‘ছায়াযুদ্ধ’ চালাচ্ছে। এবার সেই একই অভিযোগ উল্টে ভারতের দিকেই ছুড়ে দিল ইসলামাবাদ। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ বুধবার সন্ধ্যায় দাবি করেন, আফগানিস্তানের তালিবান সরকার আসলে ভারতের হয়ে যুদ্ধ করছে। তাঁর কথায়, “এখন কাবুল নয়, দিল্লির যুদ্ধ চলছে সীমান্তে।” এই মন্তব্য ঘিরে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
ভারতের বিরুদ্ধে ‘ছায়াযুদ্ধের’ অভিযোগ পাকিস্তানের (Pakistan)
বুধবার সন্ধ্যায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তান (Pakistan) উভয় দেশই ৪৮ ঘণ্টার সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়। কিন্তু তাতে শান্তি আসার বদলে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে আসিফের বক্তব্য ঘিরে। সংবাদমাধ্যম ‘জিয়ো নিউজ’-এর কাছে তিনি বলেন, “এই সংঘর্ষবিরতি আদৌ বজায় থাকবে কি না, তা বলা কঠিন। কারণ প্রকৃত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে দিল্লি থেকে।” তাঁর অভিযোগ, সীমান্তে আফগান বাহিনীর যে আগ্রাসন দেখা যাচ্ছে, তার পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’–এর প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
আরও পড়ুন:১০ লক্ষ টাকায় ব্যবসা শুরু করে গড়েছেন ৫০ কোটির কোম্পানি! চমকে দেবে লখনউয়ের এই যুবকের কাহিনি
গত ৯ অক্টোবর পাকিস্তান (Pakistan) বায়ুসেনা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র একটি ঘাঁটি। পাক প্রশাসন টিটিপি-কে বহুদিন ধরেই ‘ফিতনা আল খোয়ারিজ’ বলে অভিহিত করে আসছে। টিটিপি-র বিরুদ্ধে হামলার একদিন পর, অর্থাৎ ১০ অক্টোবর, সীমান্ত সংলগ্ন পকতিকা প্রদেশের মারঘি এলাকায় বিমানহানা চালানোর কথা ঘোষণা করে পাকিস্তান সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)। পাক সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি জানান, “টিটিপি-র জঙ্গিরা পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি, তাই এই অভিযান চালানো হয়েছে।”
ঘটনাচক্রে, কাবুলে হামলার দিনই ছিল আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফরের শুরু। ফলে পাকিস্তানের এই বিমানহানাকে ঘিরে কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, হামলার সময় ও রাজনৈতিক বার্তার মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কি না। আফগান সরকারের দাবি, পাক বিমানহানায় কন্দহরের অসামরিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার দুপুরে কন্দহরের জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পাকিস্তান (Pakistan) বিমান বাহিনীর বোমা হামলায় অন্তত ৫০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তালিবান সরকারের একটি সূত্র।
আরও পড়ুন:ধনতেরাসের আগে হুড়মুড়িয়ে বাড়ছে সোনার দাম, বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করলেন বৃদ্ধির কারণ
আফগানিস্তান অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান (Pakistan) তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদের দাবি, আফগান সীমান্ত থেকে টিটিপি-র হামলায় পাকিস্তানি সেনারা বারবার প্রাণ হারাচ্ছেন, তাই আত্মরক্ষার স্বার্থে এই অভিযান। এই উত্তেজনার মধ্যেই বুধবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। তবে পাকিস্তানি মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, ইসলামাবাদ এই বিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করছে না। বরং তাদের বিশ্বাস, আফগানিস্তানের নেপথ্যে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তানের (Pakistan) এই নতুন অভিযোগ কূটনৈতিকভাবে একটি বড় পদক্ষেপ—যার উদ্দেশ্য আফগান সীমান্তে নিজের অবস্থানকে শক্ত করা এবং একই সঙ্গে নয়াদিল্লির উপর চাপ সৃষ্টি করা। তবে ভারত সরকার এখনও পর্যন্ত এই অভিযোগের কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, আফগান-পাক উত্তেজনা যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।