বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে তিন দিক থেকে বড় সংকটের সম্মুখীন হয়েছে পাকিস্তান (Pakistan)। ইতিমধ্যেই ওই দেশ পশ্চিম সীমান্তে থাকা ভারতের (India) সাথে শত্রুতা করছে। এদিকে, আফগানিস্তান (Afghanistan) দখলকারী তালিবান এখন পাকিস্তানের উত্তর সীমান্তে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব সীমান্তে ইরানের (Iran) সঙ্গে পাকিস্তানের শত্রুতা সর্বজনবিদিত। অন্যদিকে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানে স্বাধীন ওয়াজিরিস্তানের দাবিতে দেশের অভ্যন্তরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। বাকি কাজ বেলুচিস্তানের বিদ্রোহীরা সম্পন্ন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান এখন ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে আটকা পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তান তালিবানদের উৎসাহিত করেছিল: উল্লেখ্য যে, আমেরিকার নির্দেশে পাকিস্তান আফগানিস্তানে তালিবানকে দাঁড় করায়। যার প্রধান করা হয় মোল্লা ওমরকে। ওমরের অধীনে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সমস্ত মুজাহিদিনকে একত্র করা হয়েছিল। এদিকে, ভারতের বিরুদ্ধেও তালিবানকে ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। ভারত সীমান্তে তৎপর সন্ত্রাসবাদীদের জন্য আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়েছিল। তাদের অস্ত্র ও টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। মূলত, ধর্মের নামে আফগানদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু, ২০০১ সালে আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হামলা সবকিছু বদলে দেয়।
আমেরিকায় হামলার পর ছবি পাল্টে যায়: আমেরিকা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে চাপ দেয় এবং তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অন্তর্ভুক্ত করে। এই সময়ে আমেরিকার কাছ থেকে পাকিস্তানকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও অর্থ দেওয়া হয়। তবে, পাকিস্তান এই তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লোকদেখানো যুদ্ধে লিপ্ত থাকলেও তারা পর্দার আড়ালে তালিবানদের সাহায্য করেছিল। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আমেরিকান হামলার পর, শীর্ষ তালিবান নেতারা পাকিস্তানে আসে এবং বহু বছর ধরে আইএসআই-এর সুরক্ষায় বসবাস করে। এই সময়ে আফগান তাললিবান নামে একটি নতুন উপদলেরও জন্ম হয়। যেটি তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান নামেও পরিচিত।
তালিবান পাকিস্তানের মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে: এখন এই তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) পাকিস্তানের মাথাব্যথা হয়ে উঠছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, টিটিপি সন্ত্রাসীবাদীরা আফগানিস্তান থেকে কাজ করছে। এই কারণে পাকিস্তান আফগান মাটিতেও বিমান হামলা চালিয়েছে। এদিকে, পাকিস্তান তার সীমান্তেও বেড়া দিচ্ছে। যে বিষয়ে তালেবান তীব্র বিরোধিতা করেছে। সীমান্ত বিরোধ ও বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকটি সামরিক সংঘর্ষ হয়েছে। তালিবান সতর্ক করেছে যে তারা পাকিস্তানকে এমন একটি শিক্ষা দেবে যা তারা সবসময় মনে রাখবে। যদিও তালিবানের পাকিস্তানের মতো সামরিক শক্তি নেই, তবুও তারা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের একটি বিশাল বাহিনী বজায় রাখে।
আরও পড়ুন: এবার পাকিস্তানি JF-17 ফাইটার জেটের ইঞ্জিন বানাবে ভারত, ৫,২৫০ কোটির চুক্তি পেল HAL
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের পুরনো শত্রুতা: ভারত ও পাকিস্তানের শত্রুতা সবারই জানা। স্বাধীনতার পর ভারত ও পাকিস্তান চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৪৮ সালে, পাকিস্তানি সেনারা আদিবাসীদের ছদ্মবেশে কাশ্মীরে আক্রমণ করেছিল। এরপর ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানি সেনারা ভারতের পশ্চিম সীমান্তে হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারত পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশ প্রতিষ্ঠা করে। এই সময়ের মধ্যে ৯০,০০০ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করেছিল। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান ভারতের সাথে কার্গিলের যুদ্ধে জড়ায়। যাতে পরাজিত হয় পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: মাত্র ৩ বছরে আয় ১,২৩০ কোটি! ক্যান্সেলড টিকিটেই মালামাল হল রেল, RTI-তে উঠে এল বড় তথ্য
ইরানের সঙ্গেও পাকিস্তানের বিরোধ: সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বহুগুণ বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায় ইরান। তখন ইরান বলেছিল যে তারা পাকিস্তান থেকে পরিচালিত জইশ-আল-আদল নামে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে টার্গেট করেছে। অপরদিকে, পাকিস্তান ইরানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। এতে বহু সাধারণ ইরানি নাগরিক নিহত হন। এরপর ইরান আবারও পাকিস্তানি সীমান্তে হামলা চালিয়ে অনেক সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করে। এই সময়ে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।