বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০২২ সাল থেকে বঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) রমরমা। চাকরি কেলেঙ্কারির দায়ে জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে বহু নেতা, এমনকি শিক্ষা দফতরের আধিকারিক। চলছে তদন্ত, উঠে আসছে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। আর এবার প্রাইমারি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই (CBI) যে তথ্য সামনে আনল তাতে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।
২০১৪ সালে হওয়া প্রাথমিকের টেট দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) নয়া মোড়
২০১৪ সালে হওয়া প্রাথমিকের টেট দুর্নীতিতে উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) নিয়ে বিরাট কারচুপির অভিযোগ সামনে এসেছে। গত সপ্তাহেই এই মামলার (Recruitment Scam) তদন্তে ফের আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে সিবিআই (CBI)। চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর কোথায় হাওয়া হয়ে গেল? উঠছে বারে বারে। প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সময় দিলেও তথ্য খুঁজে দিতে ব্যর্থ সিবিআই।
ইতিমধ্যেই এই মামলায় ওএমআর উদ্ধারের জন্য অন্য একটি সংস্থাকে নিয়োগ করতে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। যদিও সিবিআইয়ের একটি সূত্র মারফত দাবি, ওই ওএমআর শিটের আসল তথ্য আর নেই। সিবিআই সূত্রে আগেই জানানো হয়েছে, যে সার্ভারে উত্তরপত্রের নথি রাখা হয়, ২০১৭ সাল নাগাদ তা বদলে ফেলা হয়।
যে হার্ড ডিস্কে তথ্য ছিল, সেটা ২০১৭-১৮ সালে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর তারপর দাবি করা হয় যে সার্ভার ‘ক্র্যাশ’ করেছিল। টেট দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্তদের জেরা করে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর। কে বা কারা করল এই কাজ? সিবিআই এর একটি সূত্র মারফত অভিযোগ, এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার গৌতম মাজি (বর্তমানে প্রয়াত) ওই হার্ড ডিস্ক ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়, সিবিআই সূত্রে আরও দাবি, টেক্সট ফাইল হিসাবে ওএমআরের যে নথি সংরক্ষণ করা হয়েছিল তা সময়ে সময়ের সাথে বদলে দেওয়া হয়। আসল তথ্য ‘বিকৃত’ বা ‘নষ্ট’ করতে এভাবেই প্ল্যান মাফিক চলেছিল কাজ (Recruitment Scam)।
সিবিআই সূত্রে আরও খবর, ২০১৪ সালে হওয়া টেটের আসল ওএমআর শিট কিলো দরে বিক্রি হয়েছিল। ওড়িশায় ‘পেপার পাল্প’ অর্থাৎ মণ্ড তৈরি করে তা নষ্ট করা হয়েছে। তবে বিক্রির আগে ওএমআর এর সফ্ট কপি তুলে রাখা হয়েছিল কম্পিউটারে। ওএমআরের স্ক্যান করে ‘এডিএফ স্ক্যান’ (যা কখনই বদল করা সম্ভব নয়) করে সেই ওএমআরের ‘পিডিএফ ফাইল’ বানিয়ে রাখা হয়েছিল।
পরে ওএমআরের আরও একটি স্ক্যান করে সেকনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ফাইল তৈরি হয়। অত্যাধুনিক ইনফ্রা পদ্ধতিতে স্ক্যান করা করে ওএমআরকে ‘টেক্সট ফাইল’ বানিয়ে রাখা হয়। এই ‘ডট টেক্সট’ ফাইল এডিট করা সম্ভব। এই ভাবেই বদল করা হয় নথি, তথ্য।
২০১৪ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষায় অরিজিনাল ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে। আগেই কলকাতা হাইকোর্টে এ কথা জানিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তবে ডিজিটাইজ়ড কপি রয়েছে বলে আদালতে দাবি করে পর্ষদ। বলা হয়েছিল এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি কোম্পানি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছিল। তারাই ওএমআর শিটের স্ক্যান কপি রেখেছিল।
আরও পড়ুন: ফুল ফর্মে ফিরছে বর্ষা! এই দিন থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, জেলায় জেলায় জারি লাল সতর্কতা
সিবিআই এর দাবি, ওএমআরের সমস্ত তথ্য ছিল ওই সংস্থার হাতেই। এই সংক্রান্ত কোনও নথি আসল ওএমআর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে পাঠানোই হয়নি। নথিগুলো নিজেদের গুদামে রেখে দেয়। পরে সসব বিক্রি করা হয় কিলো দরে। ওই সংস্থারই অংশীদার কৌশিক মাজির নজরদারিতে এসব হয়েছিল। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি।
প্রসঙ্গত প্রাথমিকে নিয়োগের মামলায় (Primary Recruitment Scam) ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের তথ্য উদ্ধার করতে অন্য সংস্থার হাতে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। শুক্রবার এই মামলা শুনানির জন্য উঠলে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, সিবিআই সার্ভারের মূল তথ্য উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বার অন্য সংস্থা নিয়োগ করা হোক।
বিচারপতি বলেন, প্রয়োজন হলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত প্রথম সারির কোনো সংস্থা, উইপ্রো কিংবা টিসিএস-এর মতো সংস্থারও সাহায্য নিতে পারে সিবিআই। উল্লেখ্য, রতন টাটার সংস্থা টিসিএস (TCS)। সিবিআই-কে বিচারপতির আরও নির্দেশ, বিশেষ প্রয়োজনে সার্ভারের মূল তথ্য উদ্ধার করতে বিশ্বের যে কোনও সংস্থাকে নিয়োগ করা হোক।
এই মামলার আগের শুনানিতে প্রাথমিকের নিয়োগে ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই কে আসল সার্ভার বা হার্ড ডিস্কের তথ্য জমা করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। উত্তরপত্র স্ক্যান করার পর কোথায়, কোন হার্ড ডিস্কে রাখা হয়েছিল সেই নিয়ে বিস্তারিত জবাব তলব করেন জাস্টিস মান্থা।
এদিন সিবিআই আদালতে জানায়, তারা ওই তথ্য জমা দিতে পারছে না। এরপরই ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের তথ্য উদ্ধার করতে অন্য সংস্থার হাতে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। তিনি আরও বলেন এই মামলায় ওএমআর শিটের তথ্য খুঁজে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা উদ্ধার করতে যে খরচ হবে, তা বহন করবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং রাজ্য সরকার।