বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে লিভারপুলকে হারিয়ে নিজেদের চতুর্দশ তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ঘরে তুললো রিয়াল মাদ্রিদ। তিন মরশুম পর ফের ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা মাথায় উঠলো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবল ক্লাবের। এর আগে ২০১৫/১৬, ২০১৬/১৭, ২০১৭/১৮ ফুটবল মরশুমে পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের মতো অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছিল তারা। কিন্তু সেবার ব্যাপারটা ছিল অন্য। কারণ তখন দলে ছিলেন এই প্রজন্মের সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সেই তিন মরশুমের ৩৯ টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে ৪৩ টি গোল করেছিলেন। তিনি ক্লাব ছাড়ার পরের দুই মরশুমে টুর্নামেন্টের রাউন্ড অফ সিক্সটিন থেকেই ছিটকে গিয়েছিল রিয়াল। গত মরশুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেমিফাইনালে চেলসির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল বেনজেমারা। কিন্তু এই মরশুমে ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ ফলে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তুললো কার্লো আনসেলোত্তির স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। ২০১৭/১৮ মরশুমের মতো এবারও লিভারপুলকে ফাইনালে হারালো স্প্যানিশ দৈত্যরা। এর ফলে ১৪ বার এই প্রতিযোগিতা জিতে রেকর্ড গড়লো রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা এসি মিলানের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সংখ্যা ৭। এই প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদ কতটা ভয়ঙ্কর সেটা বোঝানোর জন্য এই একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।
চলতি মরশুমটা স্বপ্নের মতো কাটছিল লিভারপুলের। গোটা মরশুমে ৬৩টি ম্যাচ খেলে মাত্র ৪ টি ম্যাচে হেরেছে তারা। এফ এ কাপ এবং লিগ কাপের মতো ঘরোয়া প্রতিযোগিতা জিতে ২ টি ট্রফি ঘরে তুলেছিল জুর্গেন ক্লপের ছেলেরা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৩৮ ম্যাচ ৯২ পয়েন্ট পেয়েও ট্রফি ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছিল সালাহ-রা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল জিতে ঘরোয়া লিগ হাতছাড়া হওয়ার ক্ষততে প্রলেপ লাগাতে মরিয়া ছিল তারা। কিন্তু দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও তাদের হার মানতে হলো রিয়াল মাদ্রিদের হিমশীতল মানসিকতার কাছে।
প্রথমার্ধ থেকেই রিয়ালের রক্ষণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সালাহ, মানে, লুইস দিয়াজ-রা। অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন মিডফিল্ড ছেড়ে আক্রমণে উঠে এসে প্রেস করে চাপ বাড়াচ্ছিলেন রিয়াল ডিফেন্সের ওপর। বেশ কিছু ভালো সুযোগ তৈরি করেও গোল করতে ব্যর্থ হন তারা। বরং প্রথমার্ধের শেষ দিকে সেই অর্ধের একমাত্র তৈরি হওয়া সুযোগ থেকেই রিয়ালকে এগিয়ে দিয়েছিলেন বেনজেমা। কিন্তু সেই গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। দ্বিতীয়ার্ধেও ছবিটা একরকম ছিল। কিন্তু ৫৯ মিনিটে খেলার গতির বিরুদ্ধে ফেডে ভালভার্ডের ডিফেন্স চেরা পাস থেকে রিয়ালকে এগিয়ে দেন তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়র। চলতি মরশুমে এটি ছিল তার ২২ তম গোল এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের চতুর্থ গোল। এরপর লড়াইটা হয়ে দাঁড়ায় লিভারপুল ফরোয়ার্ড বনাম গোলরক্ষক থিবো কুর্তুয়ার মধ্যে। সালাহ-র দু দুটি বিপজ্জনক শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচান তিনি। ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিট ঠান্ডা মাথায় বল যথাসম্ভব নিজেদের দখলে রেখে লিভারপুলের জয়ের সম্ভাবনা শেষ করে দেন লুকা মদ্রিচরা।
এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের সাথে সাথে মরশুমে ৩টি ট্রফি জেতা জয়ে গেল রিয়ালের। এর আগে স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং লা লিগা জিতেছিল কার্লো আনসেলোত্তির ছেলেরা। অসাধারণ মরশুম কাটালেন করিম বেনজেমা, লুকা মদ্রিচ, থিবো কুর্তুয়ারা। ভিনিসিয়াস গোল করলেও ফাইনালে ৯ টি অবিশ্বাস্য সেভ করে ম্যাচের নায়ক হয়ে যান কুর্তুয়া। ফাইনাল জিতে তিনি বলেছেন, “আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম, বিশেষ করে ইংল্যান্ডের দলগুলির বিরুদ্ধে। কারণ ইংল্যান্ডের ক্লাবের ভক্তরা আমাকে যোগ্য সম্মান দেয়না।” ফাইনালে গোল না পেলেও গোটা টুর্নামেন্টে ১৫ টি গোল করে লেওয়ানডস্কি এবং রোনাল্ডোর পরে তৃতীয় ফুটবলার হিসাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক মরশুমে ১৫ গোল করার কৃতিত্ব গড়লেন তিনি। অল্পের জন্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর এক মরশুমে সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গোলের রেকর্ড (১৭) ছুঁতে ব্যর্থ হন তিনি। যেভাবে নক আউটে প্রথমে ফ্রেঞ্চ লিগ চ্যাম্পিয়ন, মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে সমৃদ্ধ পিএসজি, তারপর গতবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী চেলসি, তারপর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ী সিটিকে হারানোর পর ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়ে ট্রফি তুললেন মদ্রিচরা, তাতে বলা যায় যে এটাই কোনও দলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে করা সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স। কিছুদিন আগে কিলিয়ান এমবাপ্পে-র মতো তারকাকে পিএসজির থেকে ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকেই ব্যঙ্গ করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে। মাঠেই সেই নিন্দুকদের যোগ্য জবাব দিলো রয়্যাল হোয়াইটসরা।