বিষ্ফোরণে ব‍্যবহৃত অস্ত্র লোকানো ছিল বাড়িতে, কীভাবে ধরা পড়েছিলেন সঞ্জয়? রইল নাটকীয় সেই কাহিনি

বাংলাহান্ট ডেস্ক: ৬২ বছরের জীবনে বহু বিতর্ক জড়িয়েছে সঞ্জয় দত্তের (Sanjay Dutt) নামের সঙ্গে। তবে সবথেকে বড় এবং ভয়ঙ্কর কাণ্ডটা ঘটেছিল ১৯৯৩ সালে। ওই বছরেই মুম্বইয়ে ভয়াবহ বিষ্ফোরণে (Mumbai Blast) প্রাণ গিয়েছিল ২৫৭ জনের, আহত হয়েছিলেন ১৪০০ র ও বেশি মানুষ। সেই বিষ্ফোরণে নাম জড়িয়েছিল সঞ্জয়ের।

অভিযোগ উঠেছিল, মুম্বই হামলায় ব‍্যবহৃত বহু অস্ত্রশস্ত্র, বিষ্ফোরক নিজের বাংলোতে লুকিয়ে রেখেছিলেন সঞ্জয়। পুলিসি তদন্তে ধরা পড়েছিল সে সত‍্য। কীভাবে অভিনেতার কুকীর্তি ধরা পড়েছিল আর তাঁর এবং তাঁর বাবা সুনীল দত্তের পরিস্থিতিই বা কী হয়েছিল, সমস্তটাই নিজের আত্মজীবনীতে লিখে রেখেছেন বিষ্ফোরণের তদন্তকারী আধিকারিক রাকেশ মারিয়া।

21 Sanjaydutt IndiaInk superJumbo v3
সম্প্রতি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ‍্যমের তরফে প্রকাশ‍্যে আনা হয়েছিল সেই লেখা, যেখানে সঞ্জয়ের আত্মসমর্পণ থেকে গ্রেফতারির নাটকীয় ঘটনার স্মৃতি উঠে এসেছে। তাও আবার সরাসরি তদন্তকারী অফিসারের জবানিতে। মাত্র ১২ ঘন্টার মধ‍্যে বিষ্ফোরণের নেপথ‍্যে থাকা মাথাদের ধরে ফেলেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার রাকেশ মারিয়া।

কিন্তু সঞ্জয় দত্তের নাম উঠে আসাটা যে কত বড় চমক ছিল সেটা খুব স্পষ্ট ভাবেই লিখেছেন তিনি। নিজের উর্দ্ধতন অফিসারদের যখন সঞ্জয়ের জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা তিনি জানান তখন কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। সে সময়ে মরিশাসে ছবির শুটিং করছিলেন অভিনেতা।

1528609898
ঠিক হয়েছিল তিনি ভারতে ফিরলে তখনি তাঁকে চেপে ধরা হবে। কিন্তু কোনো ভাবে এক সংবাদপত্রে খবর বেরিয়ে যায় যে সঞ্জয় অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন। আত্মজীবনীতে লেখা রয়েছে, তদন্তের সময়েই জানা গিয়েছিল, দাউদ ইব্রাহিমের ভাই আনিস তাঁর দুই সঙ্গী হানিফ এবং সমীরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অস্ত্র বোঝাই একটি ভ‍্যান সঞ্জয়ের বাংলোতে পৌঁছে দিতে।

অভিনেতা দেশে ফিরতেই মারিয়া সহ অন‍্য পুলিস অফিসাররা তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে আনেন ক্রাইম ব্রাঞ্চে। আত্মজীবনীতে মারিয়া জানান, অত‍্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন সঞ্জয়। কেউ তাঁকে কোনো কিছুই জানায়নি। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেতা।

মারিয়া যখন জিজ্ঞাসা করেন, তিনি সত‍্যি কথাটা বলবেন কিনা, তখন সঞ্জয় দাবি করেছিলেন, তিনি কিছুই করেননি। সঙ্গে সঙ্গে একটা চড় এসে পড়েছিল তাঁর গালে। তারপরেই কাঁদতে কাঁদতে নিজের সমস্ত কীর্তির কথা নিজের মুখেই স্বীকার করেছিলেন সঞ্জয়।

কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন, সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হতেই নিজের বন্ধুদের তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িতে গিয়ে সব অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলতে। সঞ্জয় দত্তের অনুরোধ ছিল, তাঁর বাবাকে যেন কিছু না জানানো হয়। অভিনেতাকে আদালতে তোলা হলে তাঁকে পুলিস কাস্টডিতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

মারিয়া লিখেছেন, সেদিন সন্ধ‍্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন সুনীল দত্ত, মহেশ ভাট, রাজেন্দ্র কুমার, যশ জোহররা। সুনীল প্রথমে দাবি করেছিলেন, তাঁর ছেলে এমন কাজ করতেই পারে না। কিন্তু বাবাকে দেখেই তাঁর পায়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করেছিলেন সঞ্জয়। বলেছিলেন, “আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।”

1527396065
মারিয়া লিখেছেন, ছেলের স্বীকারোক্তি শুনে সুনীল দত্তের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। তিনি ভেতর থেকে শেষ হয়ে গিয়েছিলেন। পুলিস কাস্টডিতে থাকার সময়ে নিজের অতীত জীবন, বলিউডের সঙ্গে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের যোগাযোগের ব‍্যাপারে মারিয়াকে অনেক কিছু জানিয়েছিলেন সঞ্জয় দত্ত।

জানা যায়, তাঁর বাড়িতে রাখা ছিল তিনটে একে ৫৬ রাইফেল, ২৫ টি হ‍্যান্ড গ্রেনেড, একটি ৯ এম এম পিস্তল, নিজের জন‍্য কিছু কার্তুজ। পুলিসি হেফাজত শেষে আর্থার জেলে বিচারাধীন হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল সঞ্জয়কে।


Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর