“কোনটা দল বিরোধী….”, সেবাশ্রয়ে যুক্ত থাকাটাই হল কাল? বহিষ্কৃত হওয়ার পরেই গর্জে উঠলেন শান্তনু সেন

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তৃণমূল কংগ্রেসের চিকিৎসক নেতা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন শান্তনু সেন (Santanu Sen)। বিগত কয়েক মাসে বিশেষ করে আরজিকর কাণ্ডের পর থেকেই রাজ্যের শাসক দলের সাথে ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিলে তাঁর। যার জেরে অনেকদিন ধরেই দলের অন্দরে একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন ‘অভিষেক পন্থী’ হিসাবে পরিচিত এই তৃণমূল নেতা। আর আজ একেবারে দল থেকেই বহিষ্কার করা হল তাঁকে।

বহিষ্কৃত হওয়ার পর বিস্ফোরক শান্তনু সেন (Santanu Sen)

আচমকা দলের এমন সিদ্ধান্তে কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছেন শান্তনু (Santanu Sen)। শুরু থেকেই তৃণমূলের (Trinamool Congresss) অন্যতম বিশ্বস্ত সৈনিক তিনি। দলের খারাপ সময়েও হাত ছাড়েননি। আগস্ট মাসে আরজিকরের তরুণী চিকিৎসকের নির্মম ধর্ষণ-হত্যাকান্ডে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তিনি। স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন করার পাশাপাশি মুখ খুলেছিলেন আরজিকরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে।

তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেন ‘দলবিরোধী’ কাজের জন্য বহিস্কৃত করা হয়েছে তাঁকে। আজ দল থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর বাংলা হান্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন শান্তনু। সেখানেই প্রতিক্রিয়া দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘আজ সকালেও তৃণমূলের হয়েই কথা বললাম। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে দলের অসময়েও, অস্বস্তিকর পরিস্থিতেও দলের হয়েই ব্যাটিং করেছি। কোনটা দলবিরোধী কাজ সেটাই তো বুঝলাম না।’

প্রসঙ্গত আর জি কর কাণ্ডে সবার প্রথমে মুখ খুলেছিলেন তিনি। তাঁর প্রতিবাদকে ভালো চোখে দেখেনি তৃণমূল (Trinamool Congresss)। যার ফলস্বরূপ একের পর এক কোপ এসে পড়তে শুরু করে তাঁর ওপর। দীর্ঘদিন যে হাসপাতালের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন, সেই আর জি করের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগেই। এরপর দলের মুখপত্রের পদ থেকেও বাদ পড়েন শান্তনু সেন। আর এবার সরাসরি তাঁকে সাসপেন্ড করল দল।

আরও পড়ুন: দুর্দিনেও ছাড়েননি দলের হাত! জল্পনা সত্যি করে সেই ‘সৈনিক’ শান্তনুকে সেনকেই ছাঁটাই তৃণমূলের

আজ বাংলা হান্টেকে শান্তনু বাবু জানিয়েছেন আরজিকর আন্দোলন প্রসঙ্গে দলকে তাঁর বিষয়ে ভুল বোঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে তিনি আরজিকর আন্দোলনে মদত দিয়েছেন। অথচ আরজিকর আন্দোলনকারীরা তাঁকে দেখে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি দিতেন। প্রসঙ্গত কিছুদিন আগেও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সাথে সেবাশ্রয়ের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ডাক্তার শান্তনু সেন।

গত ২ জানুয়ারি থেকে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচি। অভিষেক ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শান্তনু ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দলীয় সূত্রে খবর ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে জড়িত থাকার কারণেই শান্তনুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

Trinamool Congress

প্রশাসনের একটি বড় অংশ মনে করছে, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে ওই কর্মসূচি আসলে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘সমান্তরাল ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার প্রয়াস। আর এই কারণেই  শান্তনুর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ আসলে ঘুরিয়ে অভিষেককেই ‘বার্তা’ দেওয়া বলেই জল্পনা তৈরী হয়েছে। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতা জানিয়েছেন, ‘শান্তনুকে দলের তরফে চিকিৎসক সংগঠনের নেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি দলকে কিছু না জানিয়েই দলের দেওয়া পদ ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচির জন্য চিকিৎসকদের এক জায়গায় নিয়ে আসেন।’

সামগ্রিক বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে শান্তনু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তিনি এই কর্মসূচির সাথে জড়িত থাকাকে আদৌ অন্যায় বলে মনে করছেন না। তবে বহিষ্কার হওয়ার পর শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছেন, ‘সেটা ভেবে দেখব’।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর