সন্তানধারণে আর প্রয়োজন নেই নারীদের! পুরুষ কোষ থেকেই ডিম্বাণু তৈরি করে ইঁদুরের জন্ম দিলেন বিজ্ঞানীরা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: সন্তানধারণের জন্য প্রয়োজন হয় একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার। কারণ পুরুষের শুক্রাণু এবং মহিলার ডিম্বাণু একত্র হয়ে তৈরি করে ভ্রূণ (Embryo)। সেখান থেকেই জন্ম নেয় শিশু। সমস্ত জীবকুলের অধিকাংশক্ষেত্রে এইভাবেই ঘটে বংশবিস্তার। কিন্তু, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একটি প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যা রীতিমতো অবাক করবে সবাইকে। মূলত, সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা (Scientists) এমন একটি কৌশল খুঁজে পেয়েছেন যার মাধ্যমে সন্তানধারণের জন্য আর প্রয়োজন পড়বে না নারীদের। হ্যাঁ, শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এবার ঠিক এই ঘটনাই সামনে এসেছে।

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দু’টি পুরুষ ইঁদুরের শরীর থেকে কোষ বের করে তা থেকে ডিম্বাণু তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, এরপর পুরুষ ইঁদুরের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিশিয়ে একটি ইঁদুরও জন্মেছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এটি মানুষের জন্যও উপকারী হতে পারে। পাশাপাশি, এতে উপকৃত হবেন সমকামীরাও। এছাড়াও, যেসমস্ত মহিলারা গর্ভধারণে সক্ষম নন কিংবা যেসমস্ত ব্যক্তি পুরুষত্বহীনতার সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরাও এই পদ্ধতির মাধ্যমে লাভবান হবেন। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে, এই কৌশলটি প্রজননজনিত রোগের চিকিৎসা আরও সহজ করে তুলবে।

মানব শিশু জন্মানোর ক্ষেত্রে দশ বছর সময় লাগবে: এই প্রসঙ্গে জাপানের কিউশু ইউনিভার্সিটির গবেষক কাতসুহিকো হায়াশি জানিয়েছেন যে, তিনি এবং তাঁর দল একসাথে প্রথমবারের মতো পুরুষ কোষ থেকে স্তন্যপায়ী জীব তৈরি করেছেন। উল্লেখ্য যে, হায়াশি কৃত্রিম শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরির জন্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত। তিনি গত ৭ মার্চ লন্ডনে আন্তর্জাতিক মানব জিনোম এডিটিং শীর্ষ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

কাতসুহিকো হায়াশি জানান, “আমরা পুরুষ ইঁদুরের কোষ থেকে ডিম্বাণু তৈরি করেছি। তবে মানুষের কোষ থেকে ডিম্বাণু তৈরি করতে আরও অন্তত এক দশক সময় লাগবে। ভবিষ্যতে আমরা ল্যাবেই মানুষের ডিম্বাণু তৈরি করব। কিন্তু মহিলাদের কোষ থেকে এটি তৈরি করতে অনেক সময় লাগতে পারে।”

মানব কোষে পরীক্ষা শুরু হয়েছে: ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, হায়াশি এবং তাঁর দল এখন মানব কোষের সাথে একই পরীক্ষা করা শুরু করেছে। হায়াশি বলেছেন যে, প্রযুক্তিগতভাবে কোনো মহিলার সাহায্য ছাড়াই পুরুষের কোষ থেকে সন্তান তৈরি করতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে। মূলত, এটিকে ক্লিনিক্যালি নিরাপদ করতে প্রযুক্তির উন্নয়ন করতেই এই সময় লাগবে। এমতাবস্থায়, এই আবিষ্কার সফল হলে শুধু বিজ্ঞানই উপকৃত হবে না, পাশাপাশি সমাজও উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এই কৌশলটি ভবিষ্যতে টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত মহিলাদের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত, তাঁদের শরীরে X ক্রোমোজোমের একটি কপি অনুপস্থিত থাকে। এদিকে, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. জর্জ ডেলি বলেন, হায়াশির কৌশলটি ছিল আশ্চর্যজনক। কিন্তু ল্যাবে পুরুষ মানুষের কোষ থেকে ডিম তৈরি করা সহজ হবে না। ইঁদুরের ক্ষেত্রে এটা সহজ ছিল। কারণ বিজ্ঞানীরা এখনও মানুষের জন্য নির্দিষ্ট গ্যামেটোজেনেসিসের প্রক্রিয়া বুঝতে পারেননি। পাশাপাশি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে কর্মরত অধ্যাপক ড. এমেন্ডার ক্লার্ক এই প্রসঙ্গে জানান, হায়াশি একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেদিন তাঁরা মানুষের সাথে এই কাজটি করতে পারবেন, সেদিন তাঁরা ভবিষ্যৎ বদলে দেবেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর