বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ জেদ দুই প্রকার। এক ধরণের জেদ একজন সাধারণ মানুষকে ধ্বংস করে এবং অন্যটি তাকে সব ধরনের প্রতিকূলতা ছাপিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করে দৃঢ়ভাবে এগোনোর সাহস জোগায়। দ্বিতীয় ধরণের জেদের শিকার হওয়া মানুষ সব ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের পথ তৈরি করেন। ভারতীয় মহিলা তীরন্দাজ শীতল দেবী (Sheetal Devi) এমনই এক জেদি মানুষের উদাহরণ, যার দুটি হাত না থাকা সত্ত্বেও তাকে আকাশ ছোঁয়া থেকে আটকানো যায়নি।
এই জেদ তাকে বিশ্বের একমাত্র মহিলা তীরন্দাজ করে তুলেছে যে হাত ছাড়াই নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম। আজ বিশ্ব প্যারা আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমেছিলেন বছর ১৬-র শীতল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর চীনের প্রতিপক্ষ কিউর ওজনুরের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর তিনি ১৩৮ – ১৪০ ফলে পরাজয় স্বীকার করে রৌপ্যাপদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হয়েছেন। তবে তার জন্য গর্বিত গোটা দেশ। চেক প্রজাতন্ত্রের পিলসেনে অনুষ্ঠিত এই চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে এক ভারতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সরিতাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন শীতল। তিনি ওই ম্যাচে ১৩৭ – ১৩৩ স্কোর নিয়ে জয় পেয়েছিলেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের লোহি ধর গ্রামের জন্ম নেওয়া বর্তমানে ১৬ বছর বয়সী শীতল দেবী অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে লড়াই করে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। তার বাবা হলেন একজন কৃষক এবং মা ছাগল প্রতিপালন করেন। তিনি জম্মুর মাতা বৈষ্ণোদেবী আর্চারি অ্যাকাডেমি থেকে তীরন্দাজী-তে নিজের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন। জন্ম থেকেই শীতলের হাত নেই। গোটা পৃথিবীর চোখে তার শরীরে একটা বড় অপূর্ণতা আছে, কিন্তু সেই দৈব তাকে আটকাতে পারেনি নিজের স্বপ্ন ছোঁয়ার থেকে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে শীতল দেবী বলেছিলেন যে তিনি কখনও ভাবেননি যে তিনি তিরন্দাজি করতে পারবেন। তার কোচ কুলদীপ কুমার তার চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করেছেন। তার একটি ফোন কলের পরই শীতলের জীবন বদলে যায়। কুলদীপ জানিয়েছেন, ‘আমি শীতলকে অ্যাকাডেমিতে এসে অন্যদের শুটিং দেখতে বলেছিলাম। তারপরই ও দ্রুত এগিয়ে গেল। এরপর কোচরা তাকে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নিয়ে যান। ওর এই আর্চারির প্রতি আগ্রহ ছিল দেখার মতো।’
শীতল দেবী চলতি সপ্তাহে বিশ্ব আর্চারি প্যারা চ্যাম্পিয়নশিপে নেমেছেন ঠিকই তবে এটি তার প্রথম আন্তর্জাতিক ইভেন্ট নয়। এর আগে গত মে মাসে চেক রিপাবলিকে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান প্যারা আর্চারি কাপে তিনি রৌপ্য পদক জিতেছিলেন। ভবিষ্যতে তিনি আরও পদক জিতে বিশ্বে ভারতের নাম উজ্জ্বল করবেন বলে সকলের বিশ্বাস।