অনুব্রত চুনোপুটি! কীভাবে ১৩৩ কোটির মালিক হলেন শাহজাহান? সিনেমাকে টেক্কা দেবে সেই কাহিনী!

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানকে (Sheikh Shahjahan) নিয়ে চর্চার অন্ত নেই। দাপুটে এই তৃণমূল নেতার কর্মকাণ্ডের কথা ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছে রাজ্যবাসী। নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে খুন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি। তবে এবার সামনে এসেছে তাঁর বেআইনি আর্থিক লেনদেনের কথা! যা জানাজানি হওয়ার পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। কেউ কেউ তাঁর তুলনা বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে করতে শুরু করেছেন!

বীরভূমের জেলা তৃণমূল (TMC) সভাপতি ছিলেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট। তাঁর দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। রাজনৈতিক পরিচয়ের দিক থেকে দেখা হলে সন্দেশখালির নেতার সঙ্গে তাঁর কোনও তুলনা নেই। তবে ব্লক সভাপতি শাহজাহান বেআইনি আর্থিক লেনদেনের নিরিখে কিন্তু পিছনে ফেলে দিয়েছেন অনুব্রতকে! তাঁর মোট সম্পত্তির (Property) পরিমাণ ১০০ কোটির টপকাতে পারেনি ইডি (Enforcement Directorate)। শুধু তাই নয়, এই সম্পত্তি করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল কেষ্টর।

অন্যদিকে শাহজাহান গত কয়েক বছরের মতো প্রায় দেড়শো কোটির ‘সাম্রাজ্য’ দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। ২০১৭-১৮ সাল থেকে দু’হাতে টাকা ‘কামিয়েছেন’ সন্দেশখালির এই নেতা, দাবি ইডির। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ সালে চিংড়ি বিক্রি থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে ৩৩ কোটি টাকা এসেছে দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য তাঁর মালিকানাধীন সংস্থার নাম শেখ সাবিনা ফিশারি।

আরও পড়ুনঃ ‘এমন একটি কাজ করেছি…’, হঠাৎ কেন বিচারপতির আসন ত্যাগ? এতদিনে মুখ খুললেন অভিজিৎ গাঙ্গুলি

মেসার্স অরূপ কুমার সোম উল্লিখিত দুই বছরে এই অ্যাকাউন্টে ৩৩ কোটি টাকা পেমেন্ট করেছেন। এখানেই শেষ নয়, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে শাহজাহানের কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ম্যানগাম এক্সপোর্টের তরফ থেকে পাঠানো হয়েছে ১০৪ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডির (ED) দাবি, এখানে কিন্তু জ্যান্ত চিংড়ির কোনও গল্প নেই! বরং তা কাল্পনিক! শুধুমাত্র খাতায় কলমে এন্ট্রি করে পেমেন্ট করা হয়েছে। শাহজাহান ম্যাগনাম এক্সপোর্ট সংস্থাকে নগদ টাকা দিয়েছে। সমপরিমাণ (সাদা) অর্থ ম্যাগনাম এক্সপোর্টের তরফ থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের জেরার মুখে পড়ে উক্ত সংস্থার অংশীদার অরুণ সেনগুপ্ত সব স্বীকার করে নিয়েছেন।

জানা যাচ্ছে, ইডির কাছে অরুণ দাবি করেছেন, তাঁর দুই মেয়ে আছে। শাহজাহানের তরফ থেকে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন। পরিবারের নিরাপত্তার খাতিরেই তিনি এই বেআইনি লেনদেন করেছেন বলে জানিয়েছেন অরুণ। এদিকে অর্থবর্ষ ধরে এন্ট্রির খতিয়ান অরূপ এবং অরুণের কাছ থেকে চেয়ে পাঠিয়েছিল ইডি। তবে তা এখনও দেওয়া হয়নি বলে আদালতে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

sheikh shahjahan claims he is a victim of political conspiracy

কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, শাহজাহান যে চিংড়ি বিক্রি করতো তার মাত্র ১৫% তাঁর ফার্মে উৎপাদিত হতো। ৫০% আসতো অন্য মাছ ব্যবসায়ীদের থেকে এবং বাকি ৩৫% দখলীকৃত ভেড়ি কিংবা ফার্ম থেকে আসতো বলে খবর। শাহজাহানকে যারা চিংড়ি বিক্রি করতেন তাঁদের নামের একটি তালিকা ইতিমধ্যেই ইডি তৈরি করে ফেলেছে বলে খবর। সেই সঙ্গেই জানা যাচ্ছে, শাহজাহানের সংস্থা সাবিনা ফিশারিজের অ্যাকাউন্ট থেকে আবার বেশ কিছু অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হতো। সেই তালিকায় নাম রয়েছে শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীর, দিদারবক্স মোল্লা সহ বেশ কয়েকজনদের। শাহজাহান ঘনিষ্ঠ নামে পরিচিত মইনুলের দাবি, বেনামে সম্পত্তি কেনার জন্য এই অর্থ পাঠানো হতো। তবে ইডির দাবি, এখনও অবধি যে অর্থের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে তা একটি অংশ মাত্র। তদন্ত প্রক্রিয়া এগোনোর সঙ্গে শাহজাহানের আরও ‘খাজানা’র খোঁজ মিলতে পারে বলে অনুমান।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর