ছেলে মোদী সরকারে মন্ত্রী, মা-বাবা এখনও করেন চাষবাস

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ৫৯ বছর বয়সী বরুদম্মল প্রখর রোদের মধ্যেও জমিতে চাষ করার জন্য বেরিয়ে পড়েন। বরুদম্মল গ্রামে বসবাস করা বাকি মহিলাদের মতই। আবার তাঁর সঙ্গে তাঁর স্বামী ৬৮ বছর বয়সী লোগনাথন একই ভাবে চাষবাসের কাজ করেন। দুজন খুবই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করেন। তবে সবথেকে অবাক করা বিষয় হল, এই বৃদ্ধ দম্পতির ছেলে এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁদের সন্তান এল মুরুগন এই মাসেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হয়েছে। কিন্তু এরপরেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৃদ্ধ বাবা-মা চাষের জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন।

আরও একটি বড় বিষয় হল, এনারা যেই জমিতে কাজ করেন, সেটি নিজের না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মা বলেন, আমি কী করব? আমার ছেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছে তো কী? আমাদের ছেলে নরেন্দ্র মোদী সরকারে মন্ত্রী হয়েছে, সেটাতে গর্ব হলেও, আমরা শ্রেয় নিতে চাইনা। বৃদ্ধ দম্পতি জানান, আমরা ওঁর ক্যারিয়ারের জন্য কিছুই করতে পারিনি।

দলিত সম্প্রদায় ভুক্ত এই দম্পতি এখনও ঝুপড়ির মধ্যে বসবাস করেন। কখনও কুলির কাজ, আবার কখনও চাষের জমিতে কাজ, কোনও সময়েই বসে থাকেন না কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মা-বাবা। ছেলে দেশের এত বড় পদে রয়েছেন, সেটা এনাদের কাছে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই না। দম্পতি যখন প্রতিবেশীদের কাছে জানতে পারেন যে, তাঁদের ছেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন, তখন তাঁরা চাষের জমিতেই কাজ করছিলেন।

২০০০ সালের মার্চ মাসে মুরুগন তামিলনাড়ুতে বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পান। মুরুগনের মা-বাবা সেই সময়েও খুব খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা নিজেদের জীবন নিজেদের মতন করে বাঁচতে চাইছিলেন। পাঁচ বছর আগে এই বৃদ্ধ দম্পতির ছোট ছেলের মৃত্যু হয়েছে, আর তখন থেকে এনারা বৌমা এবং তাঁদের নাতির দেখভাল করছেন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাবা জানান, মুরুগন একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। সরকারি স্কুলে শিক্ষা নেওয়ার পর সে চেন্নাইয়ের আম্বেদকর আইন কলেজে ভর্তি হয়। ছেলের পড়াশোনার জন্য লোগনাথন মানুষের থেকে ধারও নিয়েছিল। মুরুগন বারবার তাঁর বাবা-মাকে চেন্নাইয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু ওনারা যাননি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মা জানান, ‘আমরা মাঝে মধ্যে যেতাম, তিন-চারদিন থাকতাম তারপর আবার চলে আসতাম।” মুরুগনের মা জানান, ছেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েই ফোন করে জানিয়েছিল। আমরা তাঁর এই নতুন জীবন নিয়ে খুব খুশি।

মুরুগনের বাবা-মা যেই জমিতে কাজ করেন, সেই জমির মালিক জানান, ছেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরেও এদের স্বভাব চরিত্রে একফোঁটাও বদল আসেনি। গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, রাজ্য সরকার যখন করোনার সময়ে বিনামূল্যে রেশন বিলি করছিল, তখন লোগনাথন সাধারণ মানুষের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে রেশন নিত। গ্রামের বাসিন্দা জানান, দুজনাই নিজের সাধারণ জীবন-যাপনের জন্য এলাকার মানুষের কাছে বিখ্যাত। এত বড় নেতার অভিভাবক হয়েও, এদের কাছে এক টুকরো জমি নেই এখনও।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৃদ্ধ মা-বাবা জানান, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পরিশ্রম করে যেতে চাই। ওনারা জানান, ‘আমাদের ছেলে অনেক বড় জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, একজন বাবা-মা হিসেবে এটা আমাদের কাছে অনেক গর্বের বিষয়। কিন্তু এর থেকে বেশী আমরা আর কিছু চাইনা।”


Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর