বাংলা হান্ট ডেস্ক: অর্থের লোভে পড়েছে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া দেশ শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। মূলত, চিনের (China) কাছ থেকেই এই লোভ পেয়েছে তারা। জানা গিয়েছে, চিন হাম্বানটোটা বন্দরে তাদের গুপ্তচর জাহাজ থামানোর অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের প্রবল আপত্তির পর শ্রীলঙ্কা প্রথমে চিনকে সেই অনুমতি দিতে প্রত্যাখ্যান করে। যদিও, পরে শ্রীলঙ্কা চিনের ওই জাহাজটিকে হাম্বানটোটা বন্দরে থামতে দেয় এবং পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ পিএনএস তৈমুরকেও নিজের দেশে আশ্রয় দেয়। এমনকি, সবচেয়ে অবাক করার মত বিষয় হল শ্রীলঙ্কা এখন পাকিস্তানের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করতে চলেছে। এমতাবস্থায়, শ্রীলঙ্কা এহেন কাজ করে ভারতের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে কি না সেই বিষয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রতিবেদনে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করা হল।
ভারত সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাকে বিলিয়ন ডলার সাহায্য করেছে: জানিয়ে রাখি যে, ভারত সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাকে বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সাহায্য করেছে। এরপরও তারা ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। শ্রীলঙ্কার রনিল বিক্রমাসিংহে সরকার প্রথমে চিনে নির্মিত পাকিস্তানের সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধজাহাজ পিএনএস তৈমুরকে নোঙর ও সামরিক মহড়া পরিচালনার অনুমোদন দেয়। এরপর ভারতের প্রবল আপত্তির পর চিনের শক্তিশালী গুপ্তচর জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ৫-কে হাম্বানটোটা বন্দরে থাকার অনুমতিও দেওয়া হয়।
চিন শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর লিজ নিয়েছে: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হাম্বানটোটা বন্দর চিনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, চিন ভবিষ্যতে এটিকে নৌ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এমতাবস্থায়, শ্রীলঙ্কায় চিনের এই গুপ্তচর জাহাজ থামানোর তীব্র বিরোধিতা করেছিল ভারত ও আমেরিকা। এমনকি, ভারতের প্রবল আপত্তির পর প্রথমে রাজিও হয় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু রনিল বিক্রমাসিংহে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চিন। কয়েকদিনের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর অর্থের লোভে চিনের কাছে মাথা নত করে দরিদ্র শ্রীলঙ্কা। মূলত, ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কাকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে চিন। আর সেই কারণেই ঋণের জালে দেশটিকে আটকে রেখে চিন ৯৯ বছরের জন্য পুরো হাম্বানটোটা বন্দর দখল করে নিয়েছে।
শ্রীলঙ্কাকে কি দিয়েছে চিন: জানা গিয়েছে, কলম্বোকে দেওয়া পরিকাঠামোগত ঋণ পুনর্গঠন করতে শ্রীলঙ্কাকে লোভ দেখিয়েছে চিন। এদিকে, শ্রীলঙ্কার জন্য এই ঋণ পুনর্গঠন করাও প্রয়োজন। কারণ তাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে একটি বেলআউট প্যাকেজ নিতে হত। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিতে গেলেও চিনের ঋণের পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, চিন বেঁকে বসলে শ্রীলঙ্কা মুদ্রা তহবিল থেকে বেলআউট প্যাকেজ নিতে পারত না। তাই, চিনের প্রবল প্রতিক্রিয়ার পর, শ্রীলঙ্কা ভয়ে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।
চিনকে সাহায্য করতে কেন ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা: মূলত, চিনের বন্ধু পাকিস্তানকে খুশি করতে ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তান নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ পিএনএস তৈমুরকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছিল বাংলাদেশ। এমতাবস্থায়, শ্রীলঙ্কা তাকে আশ্রয় দেয় এবং এখন সেটির সাথে সামরিক মহড়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে সে দেশ। জানা গিয়েছে, ওই যুদ্ধজাহাজটি লেজার গাইডেড মিসাইল এবং বেশ কয়েকটি সেন্সর দ্বারা সজ্জিত।
এলটিটিইকে নির্মূল করতে শ্রীলঙ্কাকে সামরিক সহায়তা করেছিল পাকিস্তান: প্রকৃতপক্ষে, শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর তামিল জঙ্গি গোষ্ঠী এলটিটিই-কে নির্মূল করতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বড় ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও সামরিক কর্মকর্তা দিয়ে সাহায্য করে। যদিও, সেই সময়ে ভারত শ্রীলঙ্কাকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেনি। এদিকে, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কায় ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ট্যাঙ্ক এবং ৬৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র পাঠিয়েছিল। এই সামরিক সাহায্যের কারণেও শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং এখন তারা পাকিস্তানের সাথে সামরিক মহড়া নিতেও প্রস্তুত।