বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রতিটি বড় পদক্ষেপে সফল হওয়ার পেছনে থাকে অদম্য জেদ এবং কঠিন পরিশ্রম। যদিও, অনেকের ক্ষেত্রে আবার এই লড়াই আরও কঠিন হয়ে যায় দারিদ্র্যের ভ্রূকুটিতে। তবে, সেই প্রতিবন্ধকতাকেও তুড়ি মেরে হারিয়ে দিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেই স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে যান কিছুজন। আর তাঁরাই হয়ে উঠেন সবার কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে আমাদেরই রাজ্যের (West Bengal) এক লড়াকু যুবকের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব।
জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) বৈরাতিগুড়ির যুবক শ্রীকৃষ্ণ সরকার ছোটবেলা থেকেই নিত্য অভাবকে সঙ্গে নিয়ে বড় হয়েছেন। তাঁর বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা এবং ভাই। এদিকে, শ্রীকৃষ্ণর বাবা হরিদাস সরকার চোখে দেখতে পান না। এমতাবস্থায়, কোনোমতে ভিক্ষে করেই সামান্য টাকা জুটতো। এদিকে, সংসারের খরচ চালাতে এবং ছেলেদের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে শ্রীকৃষ্ণর মা রংমালা দেবী ঘাস কাটতে যেতেন। আর এভাবেই দিন গুজরান হত তাঁদের।
সেখান থেকেই শ্রীকৃষ্ণ এখন পৌঁছে গিয়েছেন আইআইএসসি বেঙ্গালুরুতে এমটেকের ফাইনাল ইয়ারে। পাশাপাশি, তাঁর কাছে এখন রয়েছে একাধিক বড় কোম্পানির বিপুল মাইনের চাকরির অফারও। যদিও, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর লক্ষ্যকে আরও বড় করে রেখেছেন। তিনি চান বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সলিড মেকানিকস নিয়ে পিএইচডি করতে। তবে, এই জন্য খরচের সংস্থানের কারণে তিনি আপাতত চাকরিতে যোগ দিতে চান। আর চাকরির সঙ্গেই চালাতে চান জিআরই দেওয়ার প্রস্তুতিও। সর্বোপরি, নিজের স্বপ্নপূরণ করে মা-বাবার পাশে থাকতে চান তিনি।
এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণ জানান, “দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছিলাম একেবারেই ব্যাক বেঞ্চার। এমনকি অঙ্কতে একবার তিনও পেয়েছিলাম।” তারপর এক শিক্ষকের স্নেহপরশ পান তিনি। যা প্রত্যক্ষ হয় তাঁর ফলাফলেও। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি ৮৬ শতাংশ নম্বর পান। এমতাবস্থায়, ২০১৭ সালে উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসে কোচবিহার সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সুযোগ পেয়ে যান শ্রীকৃষ্ণ। সেখান থেকেই উচ্চশিক্ষার সফর শুরু হয়ে যায় তাঁর।
এদিকে, কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়াকালীনই গেট পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। সেখানে সফল হয়ে আইআইএসসি বেঙ্গালুরুকেই বেছে নেন শ্রীকৃষ্ণ। আপাতত বর্তমানে বুলেট ট্রেন প্রস্তুতকারী ন্যাশানাল হাইস্পিড রেল কর্পোরেশনের একটি প্রজেক্টে প্যান্টোগ্রাফ ও ক্যাটেনারির ডায়নামিক ইন্টারেকশন মডেল বানানোর কাজ করছেন তিনি।