বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দু’চোখে স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। সেই জন্য ছেড়েছিলেন পুলিশের চাকরি। কিন্তু এবার কলকাতা হাই কোর্টের এক রায়ে ওলটপালট হয়ে গেল প্রদীপ মজুমদারের (Pradip Majumdar) জীবন। ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে নাম উঠেছিল তাঁর। ২০১৮ সাল থেকে রানাঘাটের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন। কিন্তু সোমবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Recruitment Scam) ২০১৬ সালে পরীক্ষার গোটা প্যানেল বাতিল করে দেয় হাই কোর্ট। চোখের নিমেষে চাকরিহারা হয়ে পড়েন প্রদীপ।
শিক্ষকতার আগে পুলিশ কনস্টেবলের (Police Constable) চাকরি করতেন নদিয়া নিবাসী এই যুবক। প্রদীপ জানান, প্রায় ৯ বছর পুলিশে চাকরি করেছেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা (School Teacher)। তাই ‘স্বপ্নের চাকরি’ পেয়ে যাওয়ায় কনস্টেবলের চাকরি ছাড়তে দু’বারও ভাবেননি। কিন্তু আজ নিজের সেই সিদ্ধান্তের জন্যই আফসোস হচ্ছে নদিয়ার মজুমদার বাড়ির একমাত্র চাকুরে প্রদীপের।
অতীতের সংগ্রামের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘রাত জেগে পুলিশের ডিউটি করেছি। এরপর সকালে বাড়ি ফিরে বই নিয়ে বসে পড়েছি। পুলিশের কাছে ছুটিছাটা ভীষণ কম। তার মধ্যে থেকেও এসএসসির প্রস্তুতি নিয়েছি’। ২০১৬ সালের আগে ২০০৯ সালেও এসএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রদীপ। সেবার ইন্টারভিউ অবধি পৌঁছন, এরপর সেখান থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু তা সত্ত্বেও হার মানেননি। ২০১৬ সালে সাফল্যের মুখ দেখেন। কিন্তু এবার আদালতের রায়ে কার্যত অন্ধকার দেখছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘অশিক্ষিত, মঞ্চে নেচে নেচে …’ SSC নিয়োগ কাণ্ডে এবার মমতাকে নিয়ে বোমা ফাটালেন অভিজিৎ
প্রদীপের স্ত্রী বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। জটিল অসুখে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। এদিকে বৃদ্ধ মা-বাবা এবং আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা চোখের পাতা এক করতে পারেননি সদ্য চাকরিহারা এই যুবক। অতীতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করা যুবক এবারও অবশ্য হার মানতে নারাজ। প্রদীপ জানান, সকাল সকাল কলকাতার ধর্মতলায় ছুটেছেন তিনি। হকের চাকরি বুঝে নিতে আবারও আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘একদিন না একদিন তো ন্যায্য চাকরি ফিরে পাবই’।
প্রদীপ বলেন, ‘ভীষণ গরিব পরিবারের ছেলে আমি। প্রচুর কষ্ট করে মা-বাবা আমায় পড়াশোনা করিয়েছেন। অভাবের তাড়না আর কিছু একটা করতেই হবে, এই ভাবনা থেকে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিই। তবে আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করার। অনেক কষ্ট করে সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়েছি। লড়াই করেছি, দিনরাত এক করে পড়াশোনা করেছি। পুরনো চাকরি ছাড়ার আগে বেতনের অসামঞ্জস্যের কথাও ভাবিনি। নূন্যতম দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই’।