এক যুগ পেরিয়ে গেলেও হাল ছাড়েননি প্রিয়রঞ্জন! পতাকা কুড়োতে পথে নামেন ‘ফ্ল্যাগ ম্যান’

বাংলাহান্ট ডেস্ক : স্বাধীনতা দিবস হোক কিংবা প্রজাতন্ত্র দিবস, বিশেষ এই দিনগুলিতে আমাদের দেশের গলি থেকে রাস্তাঘাট সেজে ওঠে নতুন করে। জাতীয় দিবসগুলিতে চলে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান। গলি থেকে রাজপথ ঢেকে যায় তেরঙ্গায়। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো অনুষ্ঠানগুলির প্রাক্কালে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায় জাতীয় পতাকা।

নির্দিষ্ট দিনে গলিতে গলিতে উত্তোলন হয় সেই পতাকার। যে স্বাধীন দেশের জন্য লক্ষ লক্ষ বীর প্রাণ দিয়েছেন, এই পতাকা যেন তাদের শ্রেষ্ঠত্বকেই স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। তবে উৎসব শেষ হয়ে যাওয়ার পর পতাকার কি যত্ন নেন সবাই? নাকি অবহেলায় রাস্তাঘাটে ‘লুটোপুটি’ খায় দেশের স্বাধীনতা? উৎসব শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা সবাই ফিরে যাই নিজের নিজের কাজে।

আরোও পড়ুন : বড়সড় বদল রেলের নিয়মে! এই কাজ না করলে আর পাবেন না টিকিট, নয়া নির্দেশিকা জারি IRCTC

কজন আর খেয়াল রাখে জাতীয় পতাকার? তবে বারুদের স্তুপেও কখনো কখনো জন্ম নেয় গোলাপ। ঠিক তেমনই একজন হলেন প্রিয়রঞ্জন সরকার।প্রিয়রঞ্জন বাবু বালি নিশ্চিন্দার বাসিন্দা। রাস্তাঘাটে কোথাও পতাকা পড়ে থাকতে দেখলে তিনি সেটিকে সযত্নে তুলে আগলে রাখেন নিজের কাছে। এলাকায় মনু নামে পরিচিত প্রিয়রঞ্জন বাবু সত্যিই যেন ‘ফ্ল্যাগ ম্যান।’

আরোও পড়ুন : লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ‘এই’ আসন থেকে লড়তে পারেন অমিত শাহ! সামনে এল বড় খবর

স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের পর রাস্তাঘাটে জাতীয় পতাকা পড়ে থাকলে সেটিকে প্রিয়রঞ্জন বাবু তুলে সংরক্ষণ করেন। রাস্তা থেকে সেই পতাকা তুলে এনে ঘরের মধ্যে একটি বাক্সে জমা করেন তিনি। প্রিয়রঞ্জন বাবু এই কাজ করে আসছেন গত প্রায় ১৫ বছর ধরে। এই কাজ করার সময় অনেক সময় তাকে বিদ্রুপ-তামাশার মুখোমুখিও হতে হয়েছে।

অনেকে টিপ্পনি কেটে প্রিয়রঞ্জন বাবুকে কাগজ কুড়ানি বলেও ডেকে থাকেন। তবে কে কী বলল তাতে কর্ণপাত করেন না প্রিয়রঞ্জন সরকার। প্রিয়রঞ্জন বাবুর কথায়, জাতীয় পতাকা হল মা। ছোটবেলায় পিতৃবিয়োগ হয়েছে তার। অনেক কষ্ট করে তার মা তাকে মানুষ করেছেন। সেই মাই প্রিয়রঞ্জন বাবুকে শিখিয়েছেন ভারত মা হল আরেক মা।

প্রিয়রঞ্জন বাবু ছোটবেলা থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম। ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। তবুও তাকে দমানো যায়নি তার লক্ষ্য থেকে। হাওড়ায় প্রিয়রঞ্জন বাবু সবার কাছে পরিচিত ‘ফ্ল্যাগ ম্যান’ হিসাবেই। প্রিয়রঞ্জন বাবুর কথায়, “২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি বা ১৫ অগাস্ট, দেশ জুড়ে মহা সামারোহে উদযাপন হয় এই দিনগুলি। জাতীয় পতাকায় সাজানো হয় চারদিকে।”

1660645844 flag 100

তিনি আরোও বলেন, “এই বিশেষ দিনগুলির পরের দিন কি মানুষ মনে রাখে গলি রাজপথে লাগানো তেরঙা কাগজের টুকরোগুলির কথা! মনে রাখে দেশের সম্মানের কথা? এই বিশেষ দিনগুলির পরেরদিন সকাল সকাল ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যায়। নিজের খারাপ লাগে এভাবে দেশের পতাকাকে মাটিতে পড়ে থাকতে।”

পাশাপাশি তার বক্তব্য, “যেখানেই জাতীয় পতাকা দেখতে পাই তুলে নিজের ব্যাগে তুলে ফেলি। প্রথমে একা এই কাজ শুরু করেছিলাম এখন অনেককে আমার সঙ্গে পেয়েছি। আমি মনে করি, মানুষ এখন এই বিশেষ দিনগুলোকে উৎসবের দিন মনে করে। একদিনের আনন্দের জন্যে দেশের পতাকা অসম্মান করার প্রয়োজন নেই। এই পতাকার মূল্য অনেক। যারা মায়ের কদর করতে জানেনা তাদের এগুলো ধরার অধিকারও নেই।”


Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর