সমগ্ৰ বিশ্বে আর কেউ হতে পারবেন না শ্রীকান্ত জিচকারের মতো! চমকে দেবে তাঁর জীবনকাহিনি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রতিটি মানুষই তাঁর জীবনে কোনো না কোনো স্মরণীয় কাজ করতে চান। যে জন্য অনেকেই তাঁদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। অনেকে আবার নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে ফটোগ্রাফি বা ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়গুলির ওপর নিজের পেশাকে নির্ধারণ করেন। কেউ কেউ আবার সাহিত্যক্ষেত্রে দিকপাল হয়ে ওঠেন কিংবা অনেকেই রাজনীতির প্রতিও আকৃষ্ট হন। অন্তত এই বিষয়গুলিই আমরা প্রায়শই দেখতে পাই। কিন্তু, আজ আমরা এমন এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করব যাঁর পরিচয় দিতে গেলে সব বিশেষণই কম পড়বে। চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি, খেলাধূলা, রাজনীতি, থিয়েটার এমনকি, IAS অফিসার হিসেবেও নিজেকে প্রমাণিত করেছেন তিনি।

হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি। প্রথমে মনে হতেই পারে যে, একজনের পক্ষে কিভাবে এতকিছু করা সম্ভব! তাহলে জানিয়ে রাখি ৪২ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০ টি ডিগ্রি অর্জন করে রেকর্ড বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। মূলত, আজ আমরা শ্রীকান্ত জিচকারের প্রসঙ্গ আপনাদের কাছে তুলে ধরব। যে ডিগ্রি পাওয়ার জন্য একজন মানুষ জীবনভর পরিশ্রম করেন ঠিক সেইরকম ডিগ্রিই তিনি অবলীলায় হাসিল করেছেন। শুধু তাই নয়, এক কথায় শ্রীকান্ত চাচা চৌধুরী বা কম্পিউটারের চেয়েও ঢের গুণ বেশি দ্রুত ছিলেন।

শ্রীকান্ত জিচকার: ১৯৫৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, নাগপুরের আজনগাঁও-এর একটি মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীকান্ত জিচকার। আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, তাঁর নাম লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে বিশ্বের “যোগ্যতম ব্যক্তি” হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোট ৪২ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০ টি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। মূলত, তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যাঁর মানসিক ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। যেগুলির মধ্যে ছিল চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি, খেলাধূলা, রাজনীতি, থিয়েটার এবং আরও অনেক কিছু।

চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে পথচলা হয় শুরু: শ্রীকান্ত একদম প্রথমদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্ৰতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এমনকি, এমবিবিএস করার পর এমএস ডিগ্রিও লাভ করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি মত পাল্টে ফেলেন। এমনকি, তিনি ওকালতি করার সিদ্ধান্ত নেন। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ! পরবর্তীকালে তিনি এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর আন্তর্জাতিক আইনের কথা চিন্তা করে এলএলএম ডিগ্রিও হাসিল করে নেন।

শ্রীকান্ত জিচকার সেখানেই থেমে থাকেননি। তিনি পরপর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি, এমবিএ এবং সাংবাদিকতার বিষয়েও পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, তিনি ৪২ টি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২০ টি ডিগ্রি অর্জন করেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি ২৪ বছর বয়স অতিক্রম করার আগেই এই সব অর্জন করেছিলেন।

হয়েছিলেন IPS: শ্রীকান্তের বয়স যখন ২৫ বছর ছিল, তখন তিনি IPS-এর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন এবং পরীক্ষাতে পাশও করেন। কিন্তু অল্প সময়ের পরেই তিনি পদত্যাগ করে IAS-এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। সেই সময় তিনি অর্থনীতি, ইংরেজি সাহিত্য, সংস্কৃত, ভারতীয় ইতিহাস, জনব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানে ডিগ্রি লাভ করেন। শুধু তাই নয়, জেনে অবাক হবেন যে, সংস্কৃতে ডক্টর অফ লিটারেচার ডিগ্রিও তাঁর নামে নিবন্ধিত রয়েছে।

হয়েছেন সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক: ১৯৮০ সালে IAS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাত্র ৪ মাস চাকরি করে শ্রীকান্ত ওই চাকরি থেকেও পদত্যাগ করেন এবং প্রথমবারের মতো রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পাশাপাশি, ওই বছরই তিনি তাঁর প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শ্রীকান্ত ওই নির্বাচনে জিতে মহারাষ্ট্রের বিধায়ক হন। শুধু তাই নয়, তাঁকে একই সাথে ১৪ টি পোর্টফোলিও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সর্বোপরি, তাঁর নামে সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে।

ব্যক্তিগত লাইব্রেরি: তাঁর ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারটি ভারতের বৃহত্তম ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। যেখানে ছিল ৫২ হাজার বই। জানিয়ে রাখি যে, শ্রীকান্ত জিচকার একজন দুর্দান্ত থিয়েটার শিল্পী, চিত্রশিল্পী, একজন ভালো বক্তা এবং একজন পেশাদার ফটোগ্রাফারও ছিলেন। এমনকি, ধর্মীয় বিষয়েও তিনি যথেষ্ট দিকপাল ছিলেন।

Dr Shrikant Jichkar 1

মাত্র ৫১ বছর বয়সেই দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি: ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন শ্রীকান্ত। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। এমতাবস্থায়, ২০০৪ সালের ২ জুন নাগপুর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে একটি পথদুর্ঘটনায় মাত্র ৫১ বছর বয়সেই মৃত্যু হয় শ্রীকান্তের।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর