কেউ সারাচ্ছে মটরবাইক, কেউবা বসছে দোকানে! গরমের ছুটিতে কিছু রোজগারের পথে গরীব স্কুল ছাত্ররা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : আরও বেড়েছে গরমের ছুটি। সরকারের নির্দেশে স্কুল বন্ধ থাকছে আরও বেশকিছু দিন। পড়াশোনাও বলতে গেলে প্রায় বন্ধই। সংসারে অভাব নিত্য দিনের সমস্যা। করোনার প্রভাবে তা আরও প্রকট রূপ নিয়েছে। তাই বাড়িতে বসে না থেকে অর্থ উপার্জনে লেগে পড়েছে গরিব পরিবারের কিশোর পড়ুয়ারা। সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় কেউ লেগে পড়েছে দিন মজুরের কাজে। কেউ আবার সারাচ্ছে মোটরবাইক। পুরুলিয়ার পাঞ্জনবেরা, ভেলাইডি গ্রামেগুলিতে একটু ঘুরলেই এ দৃশ্য খুবিই সাধারণ বলে মনে হবে।

হারাধনের বাড়িরও একই অবস্থা। বাবা দেবু সহিস ছৌ নাচ করেন। একেই ছৌ নাচ করে যা উপার্জন হয় তাতে সংসার চলে না। তার উপর সব দিন তো আর কাজও জোটে না। বাধ্য হয়েই বড় ছেলেকে কাজ খুঁজতে বলেছিলেন মা-বাবা। তাঁদের কথা মেনে নিয়েই বরাবাজার থানার পাঞ্জনবেরা গ্রামের আদাবনা নগেন্দ্রনাথ হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র হারাধন সহিস এখন মটরবাইকের মেকানিক। হারাধনের কথায়, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু টাকা পয়সা উপার্জন হচ্ছে। আবার কাজও শিখেছি কিছুটা।’

শুধু হারাধন একাই নয়। যে দোকানে হারাধন মোটরবাইক সারায়, সেই দোকানেই কাজ করে মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র প্রেম সহিস আর ভেলাইডি গ্রামের দয়াল কর্মকারও। দয়াল পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। তার বাবা বিভূতি কর্মকার কাজ করেন ডেকরেটর্সের দোকানে। মা বাড়িতেই থাকেন। গরমের ছুটি বেড়েছে বলেই তারা কাজে লেগেছে এমনই জানায় দয়াল। সে আরও বলে, ‘স্কুল তো এখন ছুটি। বাড়িতে শুধু বসে বসে কী আর করব! তাই একটা কাজ খুঁজে নিলাম। ঘরে কিছু টাকাও আসবে। তবে স্কুল খুলে গেলেই আমরা আবার যাব স্কুলে।’

সৌরভ মাহাতো বাবাকে সংসারে সাহায্য করতে এখন মনোহারি দোকান চালায়। সিন্দরি হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সে। মনোহারি দোকানে বসে ১০০ টাকা রোজগারও হয় তার। সৌরভের বাবা রমাপদ মাহাতোর চায়ের দোকান। কোনও মতে টেনেটুনে চলে যায় সংসার। সৌরভ বলে ‘স্কুল তো বন্ধ। সময় নষ্ট করে লাভ নেই! তাই ভাবলাম বাবাকে একটু সাহায্য করি। উপার্জন খুব একটা বেশি হয় না। দিনে মাত্র ১০০ টাকা। তবে আমাদের সংসারে ওটাই অনেক।’

1655396470 new project 22

প্রথম দফায় ৪৫ দিন এবং তার পরে আরও ১১ দিন গরমের ছুটির নির্দেশ রাজ্য সরকারের। তাই সবমিলিয়ে প্রায় দুমাস বন্ধ রইল স্কুল। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর উত্তরবঙ্গের পর এবার দক্ষিণবঙ্গেও বর্ষা প্রবেশের মুখে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ রেখে গরমের ছুটি বাড়ানোর কোনও দরকারই ছিল না বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর