“হ্যাকারদের দ্রোণাচার্য”! একা হাতে সামলেছেন বড় বড় সাইবার অ্যাটাক, মাত্র ২ বছরেই কামিয়েছেন ৮০০ কোটি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে সর্বত্রই বাড়ছে অনলাইন জালিয়াতির (Cyber Fraud) ঘটনা। এমতাবস্থায়, “হ্যাকার” (Hacker)-এই শব্দটি শুনলেই যেন আতঙ্ক তৈরি হয়। কিন্তু, হ্যাকার মানেই যে তিনি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবেন তা কিন্তু নয়। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একজনের সাথে পরিচয় করাবো যিনি দেশের একজন সুপরিচিত এথিকাল হ্যাকার (হোয়াইট হ্যাকার) হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি হলেন আনন্দ প্রকাশ। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এথিক্যাল হ্যাকার হন তাঁরা যাঁরা তাঁদের দক্ষতা ব্যবহার করার মাধ্যমে সাইবার সিকিউরিটির ত্রুটি খুঁজে বের করেন এবং সেই সিকিউরিটি সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তোলেন।

এদিকে, ইতিমধ্যেই আনন্দ বিশ্বের একাধিক শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিতে পরিষেবা প্রদান করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে টুইটার থেকে শুরু করে মেটা এবং উবের-এর মতো সংস্থা। পাশাপাশি, এমন অনেক এথিক্যাল হ্যাকার রয়েছেন যাঁরা আনন্দকে তাঁদের “গুরু” বলে মনে করেন। সম্প্রতি, তিনি তাঁর স্টার্টআপ কোম্পানি PingSafe-কে ১০০ মিলিয়ন ডলারে (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) বিক্রি করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন। এই চুক্তির প্রায় ২ বছর আগে, তিনি নিশান্ত মিত্তালের সাথে ওই সংস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। আমেরিকান স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত সেন্টিনেলওয়ান এটি কিনে নেয়।

অপূর্ণ থেকে যায় IIT-তে পড়ার স্বপ্ন: উল্লেখ্য যে, আনন্দ প্রকাশ ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজস্থানের বাসিন্দা। আনন্দ IIT-তে পড়াশোনার জন্য প্রচুর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে সফল হননি তিনি। এরপর আনন্দ ভেলোর ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি তাঁর পরিবারের প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। এদিকে, IIT-JEE-র প্রস্তুতি নিতে কোটায় যাওয়া পর্যন্ত তাঁর কাছে কোনো কম্পিউটার ছিল না।

Success Story Of Anand Prakash

এভাবেই এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়: ২০০৮-০৯ সাল নাগাদ আনন্দ প্রায়শই ১০ টাকার বিনিময়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য কাছাকাছি থাকা সাইবার সেন্টারে যেতেন। সেই সময়ে তিনি কোটায় কোচিং করতেন। তখন তাঁর এক বন্ধু তাঁকে তাঁর Orkut অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চ্যালেঞ্জ জানান। ওই বিষয়ে তখন তাঁর কোনো জ্ঞান ছিল না। আনন্দ গুগলে ১০ ধাপের হ্যাকিং টিউটোরিয়াল দেখে বিষয়টি আয়ত্ত করে তাতে সফল হন। আর সেই মুহূর্ত থেকেই তিনি হ্যাকিংয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ পান।

আরও পড়ুন: এবার হাইড্রোজেনে চলবে গাড়ি! ভারতে প্রথম পাইলট প্রোজেক্ট শুরু করল BPCL

এইভাবে শুরু হল কেরিয়ার: সাইবার সিকিউরিটি ইন্টার্ন হিসেবে হরিয়াণা পুলিশে আনন্দ প্রকাশের কর্মজীবন শুরু হয়। তারপর ফ্লিপকার্টে সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি প্রথম চাকরি পান। ফ্লিপকার্টে কিছু সময় কাজ করার পর, আনন্দ তাঁর ভাইয়ের সাথে অ্যাপসিকিওর নামে একটি সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ভাই এখনও সেই ফার্ম চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ফুল ফর্মে RBI! Paytm-এর পর এবার Visa-Mastercard-কে ঝটকা, বড় প্রভাব পড়বে গ্রাহকদের ওপর

বড় বড় কোম্পানিকে দিয়েছেন পরিষেবা: আনন্দ প্রকাশ বর্তমানে ভারতের বিখ্যাত এথিকাল হ্যাকারদের মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি একাধিক বড় কোম্পানির সিকিউরিটির দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, টুইটার, উবের এবং মাইক্রোসফট। তিনি ২০১৭ সালে ফোর্বস ইন্ডিয়ার “থার্টি আন্ডার থার্টি” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। পাশাপাশি, ২০২০ সালে আনন্দ প্রকাশকে ভারত সরকার জাতীয় যুব পুরস্কারেও সম্মানিত করে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর